শহর ও শহরতলি মিলিয়ে বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসই একমাত্র সরকারি পশু চিকিৎসালয়। —ফাইল চিত্র।
অসুস্থ পশুদের জন্য বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্লিনিক রয়েছে। পুরনো ভবন ছেড়ে সেই ক্লিনিক নতুন ভবনে উঠে এসেছে বছর দেড়েক আগে। কিন্তু অভিযোগ, ক্লিনিকের ভবন ঝাঁ-চকচকে হলেও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় আতান্তরে পড়তে হয় পশুর মালিকদের। শহর ও শহরতলি মিলিয়ে বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসই একমাত্র সরকারি পশু চিকিৎসালয়। দোতলা নয়া ভবনে ঘরের অভাব নেই। আছে শুধু একাধিক পরিকাঠামোগত সমস্যা।
সম্প্রতি ওই ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেল, বোর্ডে লেখা আছে, সেখানে পশুদের চিকিৎসায় এক্স-রে, ইসিজি এবং ইউএসজি-র ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ কর্তব্যরত কর্মী জানালেন, এক্স-রে রোজই হয়। কিন্তু কর্মীর অভাবে ইসিজি এবং ইউএসজি সপ্তাহে কেবল মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হয়। এই দু’দিন বাদে অন্য কোনও দিন অসুস্থ পোষ্যকে সেখানে নিয়ে গেলেও ইসিজি এবং ইউএসজি না করিয়েই ফিরিয়ে আনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ঝকঝকে নতুন ক্লিনিক গড়া হলেও এখনও ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে এক্স-রে করা হয়। ডিজিটাল যন্ত্রে এক্স-রে চালু না হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পশু চিকিৎসকেরা। আরও অভিযোগ, ম্যানুয়াল এক্স-রে যন্ত্রটিও সব সময়ে ঠিক মতো কাজ করে না। তখন বাইরে থেকে এক্স-রে করিয়ে আনতে বলা হয়।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘কলকাতা ও আশপাশের এলাকার পশুপ্রেমীদের বড় অংশ এই ক্লিনিকের ভরসাতেই থাকেন। তাই রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে ভিড় লেগে থাকে। ঘটা করে নতুন ভবনে ক্লিনিক চালু করা হলেও পরিকাঠামোগত সমস্যা মেটানো হয়নি।’’ ওই ক্যাম্পাসের বাইরেই বেসরকারি পরীক্ষাগার গড়ে উঠেছে। অভিযোগ, ক্লিনিকের চিকিৎসকদের একাংশ সেখান থেকে রক্ত পরীক্ষা এবং এক্স-রে করাতে পাঠিয়ে দেন। ক্লিনিকের এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘রোজ পোষ্যদের ভিড় বাড়ছে। অথচ, ডাক্তারের সংখ্যা কম। মেডিসিন ও সার্জারির মাত্র চার জন চিকিৎসককে দিয়ে এই ভিড় সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়ালে পোষ্যদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ ভাবেই বসে থাকতে হবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষকে।’’
সরকারি ওই ক্লিনিকে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল বহু বছর আগে। আজও তা চালু হয়নি। এমনিতে সোম থেকে শুক্রবার, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা এবং শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ক্লিনিক চালু থাকার কথা। কিন্তু অভিযোগ, বেশির ভাগ চিকিৎসকই নির্ধারিত সময়ে ক্লিনিকে আসেন না। তাঁদের অনেকেই আবার ছুটির সময় হওয়ার আগেই ক্লিনিক ছেড়ে বেরিয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই কারণেই পোষ্যদের দেখাতে নিয়ে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর আগে ওই ক্লিনিকে ডায়ালিসিস ও রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হলেও সেই দু’টি পরিষেবাই বন্ধ রয়েছে। ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা যদিও দাবি করছেন, ডায়ালিসিস যন্ত্র চালু রয়েছে। কোনও প্রাণীর ডায়ালিসিসের দরকার পড়লে সেটি কাজে লাগানো হয়। যদিও চিকিৎসকদের অন্য অংশের দাবি, ডায়ালিসিস যন্ত্রটি স্রেফ পড়ে থাকে বেশির ভাগ সময়ে।
সেটির ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। অভিযোগ, বছরকয়েক আগে কেনা আরও একাধিক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এখনও প্যাকেটবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্যামসুন্দর দানাকে ক্লিনিকের অব্যবস্থার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ক্লিনিকের জন্য ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র কেনার তোড়জোড় চলছে। প্রায় ন’লক্ষ টাকা দামের ওই যন্ত্র শীঘ্রই চলে আসবে।’’ তবে অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পোষ্য নিয়ে এখানে এলে বিনা চিকিৎসায় কাউকে ফেরানো হয় না। কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে তার সমাধান করব।’’ পশুদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করানোর কথা অস্বীকার করেছেন উপাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy