Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নাম গুলিয়ে পাটনাবাজারের বদলে কিশোরী গেল পটনায়

তবে নিখোঁজ কিশোরীর কাকা দাবি করেছিলেন, মেয়েটি ফোনে কারও সঙ্গে গোপনে কথা বলত। এ নিয়ে তাঁরা বারণ করা সত্ত্বেও ফোন করা বন্ধ করা যায়নি। শেষে তাঁর ফোন কেড়েও নেন। পরে মেয়েটির হাতে নতুন ফোন দেখতে পাওয়া যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৬
Share: Save:

প্রেমিকের সঙ্গে মন কষাকষিতে ঘর ছেড়ে ছিল কিশোরীটি। ভেবেছিল সরাসরি প্রেমিকের ডেরায় গিয়েই বোঝাপড়া করবে। কিন্তু মেদিনীপুরের পাটনাবাজারে যাওয়ার বদলে সে চড়ে বসেছিল ভুল ট্রেনে। ভুল ভাঙে তার বিহারের পটনা স্টেশনে নামার পরেই।

কপাল জোরে সহৃদয় এক পরিবারের কাছে আশ্রয় পেলেও প্রেমিক বা বাবা-মাকে লজ্জায় নিজের ভুলের কথা জানাতে পারেনি। শেষে সেই প্রেমিকের দেওয়া ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই পুলিশ বিহারের ঝাঁঝাঁ থানার বাজিকুসুম গ্রাম থেকে চার মাস পরে সেই কিশোরীকে উদ্ধার করে আনল।

পুরুলিয়া আদালত শুক্রবার বোরো থানা এলাকার দশম শ্রেণির সেই ছাত্রীকে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৩ জুন ওই ছাত্রী নিখোঁজ হয়। তবে তার বাবা থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন আড়াই মাস পরে ১২ সেপ্টেম্বর। তিনি দাবি করেছিলেন, আত্মীয়দের বাড়িতে মেয়ে থাকতে পারে ভেবে তাঁরা খোঁজ করেন। কোথাও হদিস না পেয়ে শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন।

তবে নিখোঁজ কিশোরীর কাকা দাবি করেছিলেন, মেয়েটি ফোনে কারও সঙ্গে গোপনে কথা বলত। এ নিয়ে তাঁরা বারণ করা সত্ত্বেও ফোন করা বন্ধ করা যায়নি। শেষে তাঁর ফোন কেড়েও নেন। পরে মেয়েটির হাতে নতুন ফোন দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কে দিয়েছে বলতে চায়নি।

এরই মধ্যে হঠাৎ করে মেয়েটি বেপাত্তা হয়ে যায়। তবে তার আগে বাড়িতে কোনও গোলমাল হয়েছিল কি না পরিবারের লোকেরা জানাননি।

পুলিশের কাছে সূত্র বলতে এটুকু ছিল, মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার কিছু দিন পরে বাড়িতে ফোন করে শুধু জানিয়েছিল, সে ভাল রয়েছে। তারপরে ফোন কেটে যায়। পাল্টা ফোন করে আর ধরা যায়নি তাকে। এক দিন ওই নম্বরে বাড়ি থেকে ফোন করা হলে, উল্টো দিকে হিন্দিতে কথা শুনতে পান। তারপর থেকে সেই নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।

পুলিশ তদন্তে নেমে কিশোরীর পাশের গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পারে। ছেলেটি মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে এলেও মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজারে থেকে সেখানকার কলেজে পড়াশোনা করে। কিন্তু ওই তরুণের কাছ থেকেও মেয়েটির কোনও তথ্য পুলিশ পায়নি। শুধু এটুকু জানতে পারে, এক সময়ে সম্পর্ক থাকলেও ইদানীং তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চরমে উঠেছিল।

পুলিশ যখন কোনও দিক থেকেই হদিস করতে পাচ্ছিল না, সেই সময়ে কালীপুজোর দু’দিন আগে সেই তরুণ পুলিশকে একটি মোবাইল ফোনের নম্বর দিয়ে জানায়, কিশোরী ওই নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করে নিজের ভাল থাকার কথা জানিয়েছে।

ওই নম্বর নিয়ে ফের তদন্তে ঝাঁপিয়ে প়ড়ে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে পটনার ঝাঁঝাঁ জেলার ভাইজালা গ্রামে এই ফোনের টায়ার লোকেশন দেখাচ্ছে।

বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোরো থানার পুলিশ কয়েকদিন আগে পটনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ভাইজালার পাশে বাজিকুসুম গ্রামের ফুলমণি কিস্কু নামে এক মহিলা ওই ফোন ব্যবহার করেন। পুলিশ তাঁর বাড়িতে ওই কিশোরীকে পায়।

পুলিশের দাবি, ওই কিশোরী তাদের জানিয়েছে, পাটনাবাজারে গিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতেই সে বাড়ি ছেড়েছিল। পুরুলিয়া স্টেশনে পটনার ট্রেন ছাড়ছে শুনে কী ভেবে সে তাতে চড়ে বসে। কিন্তু ভুল যে করেছে, তা জানতে পারে পটনা স্টেশনে নামার পরে।

পটনা স্টেশন থেকে সেই সময়ে বাড়ি ফিরছিলেন ফুলমণিদেবী। শনিবার টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি স্টেশনে শুকনো মুখে একা দাঁড়িয়েছিল। কথা বলে বুঝতে পারি সে কী ভুল করেছে। এ দিকে, নিজের বাড়িতেও ফিরতে চাইছিল না। তাই পাছে কোনও বদ লোকের পাল্লায় পড়ে ভেবে সঙ্গে নিয়ে আসি।’’

তিনি জানান, সেই থেকে তাঁর বাড়িতেই ছিল ওই কিশোরী। নিজের বাড়ির ঠিকানা বা ফোন নম্বর জানাতে চাইতো না। তিনিও বিশেষ জোর করেননি। ভেবেছিলেন, এক সময়ে সে নিজেই সব জানাবে। তবে মেয়েটি শেষ পর্যন্ত বাড়িতে ফিরেছে শুনে স্বস্তি পেয়েছেন ফুলমণি।

যদিও পুলিশ জানাচ্ছে, মেয়েটির বাড়ি ছাড়ার কারণ থেকে ফিরতে না চাওয়ার জেদ ধরে রাখার মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু কিশোরীর বাবা এ নিয়ে মন্তব্যে নারাজ। তিনি শুধু বলেন, ‘‘মেয়ে ফিরে এসেছে। এতেই আমরা খুশি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Patna Patna Bazar Midnapore Missing Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE