ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে দাঁতালকে। মঙ্গলবার গভীর রাতে বুড়িগোড়ার জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র
বনের নিরাপত্তা ফিরে পেল দলমার দুই দাঁতাল। প্রায় ৩৫০ কিমি পথ উজিয়ে বুধবার রাতে বান্দোয়ানে পৌঁছয় হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে উৎপাত করা হাতি দু’টি। যাত্রাপথে নানা বাধা ছিল। বিপত্তি হয়েছে। কিন্তু শেষ ইস্তক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বন দফতরের কর্তা-কর্মীরা।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার মেদিনীপুরের আধারমণি বিটে হয়ে রাজ্য সড়ক পেরিয়ে ঘটাল এলাকায় ঢুকে পড়ে দলমার রেঞ্জের দুই দাঁতাল। সেখান থেকে হাওড়ার উত্তর ভাটোরা এলাকায় চলে যায়। হাতি দু’টিকে বাগিয়ে আনতে ঘাম ছুটেছিল বন দফতরের।
জঙ্গলে ছাড়া পাওয়ার আগে ইস্তক দুই দাতালের সঙ্গী ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাঙালি দুসাধ, সুবোধ দাস ও জয়দেব বাগতি। তাঁরা বর্ধমান ডিভিশনের ফরেস্ট গার্ড। বন্য প্রাণীকে গুলিতে ঘুমপাড়ানোর ব্যাপারে দড়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বর্ধমান বা বীরভূমে দরকার পড়লে তাঁদের ডাক পড়ে। সুবোধরা জানান, সোমবার থেকেই হাতিগুলিকে কাবু করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু ঠিক মতো জায়গা না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ মানিকপিড়াতে বাগে পেয়ে কাবু করা হয়। ঝঞ্ঝাট আরও বাকি ছিল। জঙ্গলের পথে ট্রাক নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত জঙ্গল-পথে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রাক্টর। তোলা হয় দুই দাঁতালকে। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ময়ূরঝর্না হস্তি প্রকল্পে থাকা বান্দোয়ানের জঙ্গলের পথে হাতি নিয়ে রওনা দেন বন দফতরের আধিকারিকেরা।
ঘুমের ঘোর কাটার পরে স্নান করিয়ে দেওয়া হচ্ছে খাবার। মঙ্গলবার গভীর রাতে বুড়িগোড়ার জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র
দুই দাঁতালের বান্দোয়ানে আসার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। রাস্তার পাশে উৎসাহী জনতার ভিড় থিকথিক করছে। বান্দোয়ান শহর ঢোকার আগে কাল্লাবেড়া মোড়ের কাছে একটি ট্রাকের পাটাতন যায় ভেঙে। হাতির পা চলে যায় চাকার কাছাকাছি। আরও একপ্রস্ত নাজেহাল হয় বন দফতর। হাতির পা আবার ট্রাকে তুলে বুড়িগোড়ার জঙ্গলে যখন দু’টি ট্রাকই এসে পৌঁছয়, তখন বাজে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা। এতটা পথ আনার সময়ে ট্রাকেই দু’বার ইঞ্জেকশন দিয়ে হাতি দু’টিকে বাগে রাখা হয়েছিল। হাইড্রলিক যন্ত্রের সাহায্যে হাতি নামানো হয় মাটিতে। একটি দাঁতালকে ফের ইঞ্জেকশন দেন পশু চিকিৎসকেরা।
গভীর রাতে দুই দাঁতালের বাঁধন দেওয়া হয় খুলে। তাদের শরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন চিকিৎসকেরা। খেতে দেওয়া হয় কলাগাছ, বাঁধাকপি, আলু। পাম্প চালিয়ে ধুইয়ে দেওয়া হয় গা। দেওয়া হয় দরকারি ওষুধপত্র। ঘণ্টা চারেক পরে বেশ কিছুটা চনমনে হয়ে ওঠে দাঁতাল দু’টি। তার পরে জঙ্গলের পথ ধরে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের বুড়িগোড়ার জঙ্গলে হাতি দু’টি রয়েছে বলে খবর। বান্দোয়ানের জঙ্গলে হাতি ছাড়ায় এলাকার বাসিন্দারা কিছুটা ত্রস্ত। তবে বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের আধিকারিক বিনয়কুমার মাহাতো বলেন, ‘‘হাতিগুলির গতিবিধির উপরে সব সময়ে নজর রাখা হচ্ছে। ওরা নিজেদের মতো জঙ্গলে খাবার খাচ্ছে। রাতে আরও গভীর জঙ্গলে পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy