তদন্তে ফরেন্সিক দল। নিজস্ব চিত্র
দু’রাত ছেলে ধনঞ্জয় সাইনি ঘরে ফেরেনি। সোনামুখীর পাঁচালের জঙ্গলে ছেলের পোড়া গাড়ির ভিতরে কার দগ্ধ দেহাবশেষ পড়ে, তা-ও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দুঃচিন্তায় শুক্রবার রাতভর চোখের পাতা এক করতে পারেননি বৃদ্ধা চিন্তা। শনিবার সকাল হতেই পরিজনদের কাছে আবদার ধরেন, ‘‘একবার নিয়ে চল গাড়িটা অন্তত দেখি।’’ গাড়ি দেখার পরে তিনি বলেন, ‘‘যত সময় যাচ্ছে তত খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে। ছেলেটাকে কি আর ফিরে পাব?’’
ধনঞ্জয়ের ছোট জামাইবাবু সুকুমার ঘোষ জানান, তাঁরা শুক্রবার রাতে, সোনামুখী থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেছেন।
এ দিন বেলার দিকে ঘটনাস্থলে আসে রাজ্য ফরেন্সিক দল। তাঁরা গাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেন। অনেক রাত পর্যন্ত তাঁরা খুঁটিনাটি পরীক্ষা করেন। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে, না কি গাড়ির যন্ত্রাংশে কোনও সমস্যা থেকে আগুন ধরে যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্যের ফরেন্সিক দল তদন্তে এসেছে। তাঁরা আগুন লাগার কারণ-সহ সব কিছুই খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা যেমন পরামর্শ দেবেন, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। দেহাবশেষ বাঁকুড়া মেডিক্যালে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, এ দিন বাঁকুড়া মেডিক্যালে দেহের ময়না-তদন্ত হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে ভাড়া পেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরোন পাঁচালের গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা বছর ছত্রিশের ধনঞ্জয়। তারপর থেকে ফেরেননি। ফোনেও পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে, পাঁচাল-ছান্দার পিচ রাস্তা থেকে ১০০ মিটার ভিতরে অরণ্যসরণীর উপরে তাঁর গাড়ি পোড়া অবস্থায় পাওয়া যায়। ভিতরে একটি মানুষের পোড়া দেহাবশেষ পাওয়া যায়। কিন্তু তা থেকে মৃতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এ দিন সকালে ধনঞ্জয়ের গ্রাম ছিল থমথমে। এ দিন সকালে সেখান থেকে ছেলের পোড়া গাড়ি দেখতে যান বৃদ্ধা চিন্তা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পোড়া গাড়ির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।
ধনঞ্জয়ের ছোট জামাইবাবু সুকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গণেশ বিশ্বাস বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন। পুলিশের উপরে আমাদের আস্থা আছে। আশাকরি দ্রুত রহস্যের কিনারা হবে।’’ তিনি জানান, ছোটবেলায় বাবাকে হারান ধনঞ্জয়। তাঁর শাশুড়ি জঙ্গলে কাঠ কুড়িয়ে, মুড়ি বিক্রি করে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে বড় করেছেন। মা-ছেলে এক সঙ্গে থাকত। ছেলে না ফেরায় কিছুতেই তাঁকে সামলানো যাচ্ছে না।
প্রতিবেশী গিরীশ নায়েক, লক্ষ্মী পাত্র বলেন, ‘‘এক ডাকে মানুষের বিপদে বেরিয়ে আসেন ধনঞ্জয়। অনেক সময় গাড়ির ভাড়াও নিতেন না। এ বার পাড়ায় দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন নিজের উদ্যোগে। কী ভাবে এই কাণ্ড ঘটল আমরা বুঝতে পারছি না।’’ পাঁচাল গ্রামের বাসিন্দারা চাইছেন, পুলিশ টহল নিয়মিত হোক গ্রামে। দ্রুত রহস্যের কিনারা হোক।
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচালের জঙ্গলের মাঝে পোড়া গাড়িটিকে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। পাহারায় প্রচুর পুলিশ কর্মী। গ্রামবাসীদের ভিড় এ দিনও ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy