ফতেপুর গ্রামে ফুলকপি খেতের পরিচর্যা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
মাচায় লতানে গাঢ় সবুজ গাছের উপরে ঝকঝক করছে অসংখ্য তুঁতে, গোলাপি, নীলচে সাদা রঙের ফুল। চাষ হয়েছে শিমের। তার ঠিক পাশের খেত জুড়ে রয়েছে ফুলকপি। কোনও খেত থেকে ফসল উঠছে। কোথাও চারা পরিচর্যার কাজ চলছে। রয়েছে বাঁধাকপি, টোম্যাটো, বেগুন, মুলো, শসা, লঙ্কা সহ নানা ফসল।
বছরের এই সময় অজয় ও হিংলো নদের মাঝে থাকা মুক্তিনগর, ঢেড়োবাজার, ফতেপুর, পারুলবোনা, চাপলার মতো গ্রামে গেলেই দেখা যায়, শীতকালীন আনাজে ছেয়ে গিয়েছে জমি। একটা সময়ে বছরের পর বছর ধান লাগিয়ে কাঙ্ক্ষিত লাভ মেলেনি। বরং চাষে বিকল্প পথ খোঁজাই শ্রেয়। এই সত্যটা বহু আগেই উপলব্ধি করেছেন ওই এলাকার চাষিরা। আনাজ চাষ করে ফলও পাচ্ছেন তাঁরা। মুক্তিনগরের চাষি রায় মোহন রায় ফুলকপি, আলু, পটলের পাশাপাশি বেশ কিছুটা জমিতে শিম চাষ করেছেন। জানালেন, শীতকালীন আনাজের জোগান যথেষ্টই। এখনও পর্যন্ত আনাজের বাজারদর ঠিকঠাক আছে। এখন পাইকারি বাজারে শিম ২০০-২৫০ টাকা প্রতি পাল্লা (৫ কিলো) বিক্রি হচ্ছে। এটা খারাপ নয়। ভাল দাম রয়েছে ফুলকপিরও।
চাপলা গ্রামের চাষি ভগীরথ মণ্ডল বলছেন, ‘‘ঠিক সময়ে প্রায় ১৫ কাঠা জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছি। এখন ফুলকপি পরিণত। প্রতিদিনই বাজারে নিয়ে যাচ্ছি। ভাল মানের ও আকার অনুযায়ী গড়ে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’’ এতটা দাম না-পেলেও এখন এক একটি ফুলকপিতে ১২-১৩ টাকা (পাইকারি দর) পাচ্ছেন বলে জানালেন ফতেপুরের চাষি চঞ্চল মণ্ডল। ফুলকপির সঙ্গেই চঞ্চল চাষ করেছেন বাঁধাকপি, শীতের শসা, বেগুন, লঙ্কা, টোম্যাটো। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথাগত চাষ আঁকড়ে ধরে রাখলে হবে না। বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুন প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে হবে।’’
তবে, অক্টোবরের নাগাড়ে বৃষ্টিতে বেশ কিছু চারা মরে যাওয়ায় অনেকের মাঠেই এখন ফুলকপি পরিণত নয়। নতুন চারা লাগিয়েছেন অনেকেই। চাপলার বাপি প্রামাণিক, ফতেপুরের চাষি বিদ্যুৎ লাহা, বালিতার ভুবন লাহারা বলেন, ‘‘বাজারে এখন দাম রয়েছে। তবে, জোগান বেশি হলে দাম কমবে। কারণ, দেরিতে লাগানোয় এখনও ফসল পরিণত হতে সময় লাগবে।’’ এলাকার চাষিদের দাবি, একটি কপিতে কমপক্ষে ১০ টাকা না-পেলে লোকসান হয়। কারণ, একটি ভাল মানের ফুলকপি বা বাঁধাকপির চারা তৈরিতেই ২ টাকা খরচ হয়। তার উপরে চারা বাঁচাতে পরিচার্যা, সার, অনুখাদ্য, কীটনাশক ইত্যাদির খরচ ও পরিশ্রম আছে। বাঁধাকপি চাষ হলেও বাজারজার করার মতো হয়নি। মটরশুঁটি সবে লাগানো হয়েছে। ফলন ধরতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। শীতের বেগুনও সে-ভাবে ফলেনি। তবে, ফুলকপির পাশাপাশি শিম, পালং, মুলো, টম্যাটোর জোগান ভাল। আবহাওয়াও অনুকূল আনাজ চাষের।
এর ফলে জেলার বাজারগুলিতেও শীতকালীন আনাজের দাম কমেছে। দুবরাজপুরের আনাজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি বিশেষ এলাকা থেকে আসা ফসলের উপরে বাজার নির্ভর করে না। আশাপাশের বেশ কিছু গ্রাম থেকে নানা আনাজ আসে। বাইরে থেকেও আসে। মটরশুঁটি, ভাল মানের বেগুন, বাইরে থেকে আসা লাল গাজর এবং পেঁয়াজের মতো কিছু আনাজ বাদ দিলে বাজারদর ক্রেতাদের
নাগালের মধ্যেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy