পুরুলিয়ার বাজারে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
আলু বেছে বিক্রেতার ঝুড়িতে তোলার ফাঁকে দর জানতে চেয়েছিলেন এক প্রৌঢ়। সোমবার সকালে পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে ওই বিক্রেতা কেজি প্রতি ২৪ টাকা দর জানাতেই, খানিক থমকে গেলেন ক্রেতা। তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আলুও কি রান্নার গ্যাসের সঙ্গে দর বাড়ানোর দৌড়ে নাম লেখাল!’’
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় গত কয়েক দিনে আলুর দর কেজি প্রতি পাঁচ-সাত টাকা করে বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের। সোমবার দুই জেলার নানা বাজারে জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ২৪-২৫ টাকা কেজি দরে। পোখরাজ আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ২২-২৪ টাকা। চন্দ্রমুখী আলু ৩০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে।
বাঁকুড়ার হিমঘর মালিক ও আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন বাজারে যে আলু মিলছে, তা সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আসছে। এ ছাড়া, উত্তরবঙ্গ ও ভিন্ রাজ্য থেকে কিছু আলু আসছে। চাষিরা ব্যবসায়ীদের কাছে জ্যোতি আলু ১৪-১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। পোখরাজ বিক্রি করছেন ১৩-১৫ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ৩-৪ টাকা দর বাড়িয়ে খুচরো বাজারে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু তার পরেও, খুচরো বাজারে আলুর দর কেজি প্রতি প্রায় পাঁচ টাকা করে কী ভাবে বাড়ছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
পুরুলিয়ার আলু ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা পোখরাজ আলুই এখন ভরসা জেলায়। যে আলুর বস্তার (৫০ কেজি) দাম সপ্তাহখানেক আগে ৭৫০ টাকা ছিল, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। পুরুলিয়া আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রবীর সেন জানান, পুরুলিয়ায় মূলত বাঁকুড়া থেকে আলু আসে। কিন্তু ফলন মার খাওয়ায়, এ বার বাঁকুড়ায় আলুর দর বেশ চড়া। তাই জেলার বাজারে জোগান সচল রাখতে ভরসা উত্তরপ্রদেশের আলু।
পুরুলিয়ার আলু বিক্রেতা শেখ আলম, মানবাজারের ব্যবসায়ী তারকনাথ দত্ত, রঘুনাথপুরের ব্যবসায়ী অরূপ রজকেরা বলেন, ‘‘আলুর দাম প্রায় প্রতিদিনই চড়ছে। খদ্দেরদের অনেকে বিশ্বাস করতে চাইছেন না। কয়েক দিন আগে যেখানে ১৭-১৮ টাকা কেজি দরে কিনেছেন, সেখানে এক ধাক্কায় দাম ২৩-২৪ টাকা কেন, প্রশ্ন করছেন তাঁরা।’’ বাঁকুড়ার মাচানতলার আলু ব্যবসায়ী সন্তোষ মাজি দাবি করেন, “আলুর মান একেবারেই খারাপ। ছাঁট আলু ও ছোট মাপের আলু ক্রেতারা নিচ্ছেন না। ফলে, লোকসানের আশঙ্কা থাকছে।’’
দাম বাড়ার কারণ কী? চাষিদের অনেকে জানান, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় আলু চাষে ভাল ক্ষতি হয়েছে। প্রথমে যে আলু জমিতে লাগানো হয়েছিল, টানা বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে যায়। এর পরে, চড়া দরে বীজ কিনে দ্বিতীয় বার চাষ করেন অনেকে। তাতে চাষের খরচ কয়েক গুণ বাড়লেও, ফলন ভাল হয়নি। কোতুলপুরের চাষি গদাধর ঘোষের কথায়, “প্রান্তিক চাষিরা এ বার আলু ফলাতেই পারেননি। বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু চাষি মোটা টাকা খরচ করে দ্বিতীয় বার চাষ করেছেন। দাম বেশি না পেলে, চাষের খরচ তুলব কী করে?’’ বড়জোড়ার মানাচর রামকৃষ্ণপল্লির চাষি রবিন মণ্ডলের দাবি, “আলুর দাম না বাড়ালে, এ বার বাড়ি বিক্রির পরিস্থিতি তৈরি হত। দর কিছুটা বেশি পাওয়ায়, অন্তত লোকসান এড়ানো গিয়েছে।’’
কৃষকসভার বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক যদুনাথ রায়ও বলেন, “প্রান্তিক চাষিদের দ্বিতীয় বার চাষ করার সামর্থ্য ছিল না। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে দ্বিতীয় বার যাঁরা চাষ করতে পেরেছেন, তাঁরা কিছুটা দাম পাচ্ছেন।’’ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সভাপতি বিভাস দে দাবি করেন, ‘‘চাষিরা এ বার আলুর দর এতটাই চড়া রেখেছেন, ব্যবসায়ীদের অনেকে তা কেনা ঝুঁকির বলে মনে করেছেন। ফলে, অনেকে এখনও আলু কেনেননি।’’ রাজ্য হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখনও হিমঘর থেকে পুরোদমে আলু বেরোনো শুরু হয়নি।’’ তখন দর আরও বেড়ে যায় কি না, সে আশঙ্কায় রয়েছেন ক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy