Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
ভুয়ো চিকিৎসক এ বার লাভপুরে

কলেজ পাশ না করেও ‘ডাক্তার’!

নিজের পড়াশোনা যে কলেজের প্রথম বর্ষ পর্যন্ত তা মেনেছেন চন্দনবাবু। রবিবার টেলিফোনে তাঁর জবাব, ‘‘আমি ক্লাস এইটে পড়ার সময় থেকেই এক দন্ত বিশেষজ্ঞের অধীনে কাজ করছি।

বিতর্ক: এই সেই প্রেসক্রিপসন। নিজস্ব চিত্র

বিতর্ক: এই সেই প্রেসক্রিপসন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ১৩:৩৯
Share: Save:

বিভিন্ন ওষুধের দোকানে চেম্বার করে চুটিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালাচ্ছিলেন বছরের পর বছর। কেউ কোনও দিন তাঁর ডিগ্রি নিয়ে মাথাও ঘামাননি। সম্প্রতি এক রোগীর ভুল চিকিৎসার জেরেই ভুয়ো ডিগ্রির কথা সামনে চলে এল। ইতিমধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছেন ওই ‘চিকিৎসক’। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম চন্দন চক্রবর্তী। বাড়ি বর্ধমানের কেতুগ্রামের বানুটিয়া গ্রামে।

নিজের পড়াশোনা যে কলেজের প্রথম বর্ষ পর্যন্ত তা মেনেছেন চন্দনবাবু। রবিবার টেলিফোনে তাঁর জবাব, ‘‘আমি ক্লাস এইটে পড়ার সময় থেকেই এক দন্ত বিশেষজ্ঞের অধীনে কাজ করছি। সেই অভিজ্ঞতার সুবাদে মাধ্যমিক পাশ করার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় চেম্বার চালাচ্ছি। অর্থাভাবে প্রথম বর্ষের বেশি পড়া না এগোলেও অলটারনেটিভ মেডিসিন থেকে কোয়াক ডিগ্রি অর্জন করেছি।’’ যদিও বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘ওই ডিগ্রির কোনও স্বীকৃতি নেই। তাই তার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা সম্পূর্ণ বেআইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আর্কষণ করব।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের সন্ধানে খোঁজ শুরু হয়েছে।

সাম্প্রতিক অতীতে ভুয়ো লেটারহেড ছাপিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। সেই তালিকায় যোগ হল লাভপুরের নাম। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দন নিজেকে দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে লাভপুরের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে চেম্বার চালাতেন। বছর দু’য়েক ধরে সপ্তাহে দু’দিন বসতেন স্টেশন রোড সংলগ্ন এক ওষুধের দোকানে। সেখানেই মাস দু’য়েক আগে একমাত্র ছেলে অর্পণকে নিয়ে দাঁতে ব্যথার চিকিৎসার জন্য যান স্থানীয় বিরামমন্দির এলাকার বাসিন্দা পুলক কুমার মণ্ডল। তাঁর দাবি, ওই চিকিৎসক ২৫০০ টাকার বিনিময়ে সাত দিন অন্তর পাঁচ বার দাঁতে সিল করেন। তাতেও ব্যথা না কমলে ছেলেকে নিয়ে অন্য ডাক্তারের কাছে যান তিনি। সেই চিকিৎসক ছেলেকে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, বারবার সিল করতে গিয়ে দাঁতের স্পর্শকাতর নার্ভ কেটে ফেলা হয়েছে। সেই কারণে পচন ধরে গিয়েছে। তাতেই বাড়ছে ব্যথা। চিকিৎসকদের অনেকের আবার আশঙ্কা, নার্ভ কেটে ফেলায় চোখের দৃষ্টিশক্তিরও ক্ষতি হতে পারে।

পুলকবাবু বলেন, ‘‘চিকিৎসায় ক্রুটির কথা জানাতে ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখি সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়েছে। দোকানের মালিকও দায় নিতে চাইছেন না। বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হই।’’ পুলকবাবুর স্ত্রী কাবেরীদেবী জানান, ছেলে এখনও কিছু খেতে পারছে না। ওষুধের দোকানের মালিক সুজিত বটব্যাল জানান, দিন পনেরো ধরে চন্দনবাবু চেম্বারে না আসায় তাঁর নামের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘এর আগে ওই চিকিৎসক অন্য একটি ওষুধের দোকানে বসতেন। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা ভেবেই দোকানে তাঁকে বসানো হয়। তবে তাঁর ডিগ্রির ব্যাপারে কিছু জানা ছিল না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE