বিস্ফোরণের পরে ক্লাবের অবস্থা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
রাতের অন্ধকারে বিস্ফোরণে কাঁপল দুবরাজপুরের চাঁপানগরী। গুঁড়িয়ে গেল পাকা ক্লাব ঘরের বড় অংশ। মঙ্গলবার মধ্য রাতের ঘটনা।
গ্রামবাসী, শাসকদলের একটি সূত্র ও বিজেপির অভিযোগ, এলাকায় তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর অশান্তি রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেই দ্বন্দ্বের জেরেই এক পক্ষ অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বোমা মজুত করেছিল। মজুত বোমা ফেটেই বিস্ফোরণ হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব তা মানতে চাননি।
দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘কোনও দুষ্কৃতীর কাজ। পুলিশ তদন্ত করছে।’’
বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের দাবি, ‘‘আমি স্পটে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে বিস্ফোরণ হয়েছে। মজুত বোমা ফেটে বিস্ফোরণ ঘটেছে এমন তথ্য প্রমাণ পাইনি। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে।’’ বিজেপি অবশ্য পুলিশ সুপারের তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, এই জেলায় তৃণমূল নেতার বাড়ি, ক্লাব, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্তক্ত্য আবাসন থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবন— বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এবারও তাই হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলছেন, ‘‘ক্লাবটি শাসকদলের তত্ত্বাবধানে ছিল। তাই গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার তত্ত্ব সামনে আনা হচ্ছে। বিজেপি যোগ থাকলে এতক্ষণে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু হত। কেন প্রশাসন ঘটনার তদন্তে ঠিক পদক্ষেপ করবে না, এই নিয়ে পুজোর পরে আন্দোলনে নামব।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হেতমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে ১২ বছর আগে ক্লাব গড়ে ওঠে গ্রামবাসীর মিলিত উদ্যোগে। দুটি ঘর ও একটি বারান্দা সহ ওই বাড়ির একটি ঘরে ছিল হোমিওপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসালয় ও ক্লাব সদস্যদের ওঠাবসার জায়গা। অন্য ঘরে গ্রামের কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বাসনপত্র রাখা থাকত। মঙ্গলবার মধ্যরাতের বিস্ফোরণে বাসনপত্র রাখার ঘরটি কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রসলপুর ঘেঁষা ওই গ্রামে ৩০০ পরিবারের বাস। মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠার পরে কিছু মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বুঝতে পারেন গ্রামের মাঠ পুকুর পাড়ে ক্লাব বা দাতব্য চিকিৎসালয়ের মধ্যেই ঘটনাটি ঘটেছে। খবর যায় পুলিশে। বুধবার সকাল থেকে দুবরাজপুর পুলিশ, সিআই দুবরাজপুর, বম্ব স্কোয়াড, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বোলপুর ও পরে জেলা পুলিশ সুপার— দফায় দফায় তদন্তে আসেন। কিন্তু, যাঁর কাছে ওই ক্লাবঘরের চাবি ছিল সেই শেখ হানিফ মঙ্গলবার রাত থেকেই গা ঢাকা গিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুরের হেতমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রসুলপুর গ্রামে শাসকদলের দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন বুথ সভাপতি শেখ বাবলু। অন্যটির নেতৃত্বে বুথ সহ সভাপতি আলিম মোল্লা। সরকারের বিভিন্ন কাজ করানো থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে রাশ কোন পক্ষের হাতে থাকবে, এই নিয়ে চাপানউতর চলে দুই নেতা ও তার অনুগামীদের মধ্যে। গত বছর দু’পক্ষের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াইয়ে জখম হয়েছিলেন পাঁচ জন। রসুলপুর ঘেঁষা চাঁপানগরীতে বিস্ফোরণের নেপথ্যেও সেই সমীকরণ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। আলিম মোল্লা বলছেন, ‘‘চাবি বাবলুর অনুগামীদের হাতে ছিল। জ্যারিক্যান ভর্তি বোমা মজুত করার পিছনে পরিকল্পনাও ছিল। তার আগেই বিস্ফোরণ ঘটে গেল।’’ বাবলুর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। ফোনও বন্ধ ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy