থিম গড়ার কাজ দেখতে ভিড় স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
চোখে মুখে এক রাশ আতঙ্ক। মা পেঁচাটির, দুটি ডানায় আড়াল করে রেখেছে শাবকদের। কিচ্ছুক্ষণ আগেই মারা গেছে শিশুটি। মৃতদেহ আগলে বসে আছে শোকে মুহ্যমান মা হর্নবিল। মন ভালো নেই সদা চঞ্চল বনের হনুমানেরও, কোলে বাচ্চা নিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবছে সে। কুমীর, ডলফিন, কচ্ছপ— সবার আজ অস্তিত্বের সংকট। আর এসব দেখে মন ভাল নেই মা সরস্বতীর। দুশ্চিন্তায় তাই তাঁর গালে। এটিই এ বছরের পুজোর থিম সিউড়ির অজয়পুর হাইস্কুলের।
‘‘একের পর এক গাছ কাটা পড়ছে। লুপ্ত হচ্ছে বনভূমি। বিপন্ন বন্য প্রাণ, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। প্রকৃতিতে এর প্রভাবই এ বারের পুজোর থিম।’’ বলছিলেন স্কুলের জীবন বিজ্ঞান শিক্ষক দিনবন্ধু বিশ্বাস। একদল ছাত্রের সঙ্গে নিজেই গড়েছেন প্রতিমাটি। এর আগেও নানান সামাজিক অবক্ষয় যেমন, বিশ্ব উষ্ণয়াণ, শিশু শ্রমিক, নারী নির্যাতন, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই— এসব থিমের প্রতিমা হয়েছে বলে জানান তিনি। হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার গড়াই। তিনি বলেন “বনসৃজনে অভাব। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতার বোধ গড়ে তোলার জন্য এই প্রয়াস আমাদের।”
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী প্রেমী উর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় স্কুলের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেছেন, ‘‘শুধু ছাত্র নয়, সকলকেই সচেতন হতে হবে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে। একটি গাছ, একটি প্রাণ। সারা জীবনে অন্তত একটি গাছ লাগান।’’ পরিবেশ রক্ষার আর্তি নিয়ে দু’চাকার সাইকেলে সারা ভারত, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ঘুরে প্রচার করেছেন সিউড়ির উজ্জ্বল পাল। এমন উদ্যোগ দেখে তিনি বলছেন, ‘‘বই পড়ার থেকে মডেলের মাধ্যমের শিক্ষা ছাত্রদের মনে দাগ কাটে বেশি। এ ধরণের থিম থেকে সবুজায়নের গুরুত্ব শিশুরা কখনও ভুলবে না।”
পরিবেশ বিজ্ঞানের এসব কথা এখন আর নতুন করে বলে দিতে হয় না বাপ্পা সাহা, পাপ্পু ধীবর, অভিজিত সাহা ও সেখ ফিরোজদের। স্কুল ছুটির দিনে আর টিফিনের সময় বাঁচিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। চলছে পড়ুয়াদের উঁকি ঝুঁকি। ঠাকুর দেখতে গিয়ে শিক্ষকদের ধমক। কবে আসবে পুজো। তারই প্রতিক্ষা এখন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy