সিমলাপালের গুড়িয়াঘাটি গ্রামে একটি বাড়ির রড বেঁকিয়ে দেয় হাতি। পার্শ্বলা গ্রামে তছনছ জমি। ছবি: সুশীল মাহালি
জেলার উত্তরে প্রাণহানি, দক্ষিণে তাণ্ডব। রবিবার রাতে হাতির আতঙ্ক ছড়াল বাঁকুড়া জেলার দুই এলাকা গঙ্গাজলঘাটি ও সিমলাপালে। হাতির হানায় প্রাণ গেল গঙ্গাজলঘাটি রেঞ্জের রাধাকৃষ্ণপুরের যুবক রহিম লোহারের (৩৫)। অন্য দিকে, পিড়রগাড়ি রেঞ্জের পার্শ্বলা বিট এলাকায় দাপাল এক দল হাতি। চাষের জমি থেকে মুরগির খামারে তাণ্ডব চালাল তারা। দু’টি ঘটনাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাত ৮টা নাগাদ গঙ্গাজলঘাটির রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে একটি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি ঢুকে চাষের জমিতে হানা দেয়। গ্রামবাসীরা হাতি তাড়াতে ভিড় করেন। তাড়া খেয়ে হাতিটি একটি কলাগাছ ও আমগাছে ঘেরা অন্ধকার জায়গায় চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, জায়গাটি অন্ধকার হওয়ায় হাতিটিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সময়ে রহিম সেখানে পৌঁছন। তাঁর কাছে টর্চ ছিল না। তখনই হাতিটি আচমকা রহিমের উপরে হামলা চালায়। স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত বাউরির দাবি, ‘‘প্রথমে বোঝা যায়নি রহিম হাতির হামলার মুখে পড়েছে। পরে সবার সন্দেহ হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রহিমের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, রহিমের স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন তিনি। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ রহিমের পরিবার ও পড়শিরা। স্থানীয়েরা মৃতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। গঙ্গাজলঘাটির রেঞ্জ অফিসার দেবাশিস পাইন বলেন, “মৃতের পরিবারকে সরকারি নিয়মমাফিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একটি রেসিডেন্ট হাতি গ্রামে ঢুকেছিল। ওই হাতিটির গতিবিধির উপরে আমরা নজর রাখছি।”
অন্য দিকে, জেলার দক্ষিণ বন বিভাগে আবার ঢুকে পড়েছে এক দল হাতি। বন দফতর সূত্রে খবর, দিন পাঁচেক আগে ২৯টি হাতির একটি দল ঝাড়গ্রাম থেকে কংসাবতী নদী পার হয়ে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় ঢোকে। রবিবার মাঝরাতে পিড়রগাড়ি রেঞ্জের পার্শ্বলা গ্রামে হাতিরা দু’টি দলে ভাগ ঢোকে। সারা গ্রাম দাপিয়ে বেড়ায় তারা।
গ্রামবাসীর মধ্যে প্রদ্যুৎ সিংহ মহাপাত্রের বাড়ির উঠোনে ঢুকে পড়ে আটটি হাতির দল। উঠোনের খড়ের পালুই থেকে ধান বের করে ছড়িয়ে খায় ও নষ্ট করে। প্রদ্যুৎবাবু জানান, রাত ১টা নাগাদ হাতির চিৎকার ও গাছ ভাঙার শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁর। জানলা খুলে দেখেন, আটটি হাতি বাড়ির উঠোনে খড়ের পালুই ভেঙে ধান খাচ্ছে। তিনি বলেন, “বাড়ির উঠোনে এতগুলো হাতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। চুপচাপ বসে ঠাকুরের নাম জপছিলাম। কিছুক্ষণ পরে হাতিরা চলে যায়।’’
প্রদ্যুৎবাবুর বাড়ির পাশেই একটি মুরগি-খামার রয়েছে। খামারের মূল দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে হাতির দল। সেখানে একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন দুই ভাই জয়ন্ত সিংহ মহাপাত্র ও কল্যাণ সিংহ মহাপাত্র। তাঁরা দাবি করেন, জানলা দিয়ে শুঁড় বাড়িয়ে ঘরের ভিতরে খাবার খুঁজছিল হাতি। জানলা থেকে কিছুটা দূরে খাটিয়ায় শুয়েছিলেন তাঁরা। ভয়ে তাঁরা খাটিয়ার তলায় লুকিয়ে পড়েন। খামারের অন্য একটি ঘরে ধান মজুত করা ছিল। সেই ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে বারো বস্তা ধান ও দু’বস্তা মুরগির খাবার হাতিরা নষ্ট করে বলে অভিযোগ। জয়ন্তবাবু বলেন, “প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। এমন আতঙ্কগ্রস্ত জীবনে হইনি। মনে হচ্ছিল, জানলা দিয়ে যেন যমদূত উঁকি মারছে।”
পার্শ্বলা থেকে বেরিয়ে দেড় কিলোমিটার দুরের গুড়িয়াঘাটি গ্রামে যায় হাতির দল। স্থানীয় বাসিন্দা ঝাবু মাহাতোর বাড়ির মাটির পাঁচিল ভেঙে ভিতরে ঢুকে ধান খায় তারা। ওই গ্রামের বাসিন্দা নাড়ু দাসের বাড়ির জানলার রড ভাঙে হাতি। ঘরের ভিতরে সপরিবারে ছিলেন তিনি। ভয় পেয়ে ঘরের একটি কোণায় লুকিয়ে পড়েন তাঁরা। খানিক্ষণ পরে হাতি চলে যেতে স্বস্তি ফেরে তাঁদের। দু’টি গ্রামেই চাষজমি নষ্ট করে হাতিরা। বন দফতরের এক কর্তা জানান, সিমলাপাল, সারেঙ্গা ও পিড়রগাড়ি রেঞ্জের হুলাপার্টি হাতির দলটিকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বন দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy