বোলপুর আদালতে ধৃত নুরুল ইসলাম। নিজস্ব চিত্র
টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন লাভপুরের বিধায়ক, বিজেপি নেতা মনিরুল ইসলামের দাদা নুরুল ইসলাম-সহ তিন জন। বিজেপির অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে
ভুয়ো মামলায় দলের নেতা-কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। পুলিশ ও তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
জেলা পুলিশের দাবি, লাভপুরের নবগ্রামের বাড়ি থেকে সোমবার নুরুল ইসলাম, তাঁর ছেলে মহম্মদ ওমর এবং বোলপুর থেকে মনিরুলের আপ্ত সহায়ক (পিএ) আনারুল মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ নতিবুদ্দিন এবং বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে নুরুল ইসলামদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে নতিবুদ্দিন মনিরুল ইসলামেরই খুড়তুতো ভাই।
তাঁর বাড়িও নবগ্রামে। অন্য দিকে, বিশ্বজিৎ স্থানীয় দাঁড়কা গ্রামের বাসিন্দা এবং তৃণমূলের দাঁড়কা উত্তর বুথ কমিটির সভাপতি।
ধৃত তিন জনকে মঙ্গলবার বোলপুর আদালতে হাজির করে। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল জানান, দু’টি আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নুরুল ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর এবং বোমাবাজির অভিযোগ রয়েছে। অন্য দিকে, আনারুল মণ্ডলের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে ১৫ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। ওই মামলাতেও নুরুলের নাম রয়েছে। পুলিশ দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের ১৪ দিন করে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। আদালত ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আনারুলের বাড়ি মনিরুলের বাড়ি নবগ্রাম লাগোয়া বুনিয়াডাঙা গ্রামে। বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই আনারুলকে মনিরুলে ছায়াসঙ্গী হিসাবে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তাঁদের আরও দাবি, কয়েক বছরের মধ্যেই আনারুলের আর্থিক অবস্থার চড়চড় করে উন্নতি ঘটেছে। প্রতারণার অভিযোগকারী
বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘বছর দুয়েক আগে ছেলের চাকরির জন্য আমি মনিরুল ইসলামকে সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকরি হয়নি, টাকাও ফেরত পাইনি। বারবার বলা সত্ত্বেও টালবাহানা করেছেন।’’ তাঁর দাবি, চলতি মাসের ২০ তারিখ লাভপুর থানায় লিখিত
অভিযোগ করেন।
আর এক অভিযোগকারী নতিবুদ্দিন অবশ্য বলেন, ‘‘আমি প্রতারণার অভিযোগ করিনি। ১৯ জানুয়ারি রাতে নুরুল ইসলাম এবং তাঁর তিন ছেলে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করেছিল। পরের দিন আমি পুলিশের কাছে সেই অভিযোগ করেছিলাম। পুলিশ আমাকে একটা সাদা খাতায় সই করিয়ে নিয়ে কী লিখেছে বলতে পারব না।’’
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে মনিরুল সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর দাদা নুরুল ইসলামও তৃণমূলে আসেন। তিনি দলের মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিও নির্বাচিত হন। ২০১১ ও ২০১৬ সালে তৃমমূলের টিকিটে মনিরুল লাভপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হন। কিন্তু, নানা কারণে দলের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন তিনি। তার জেরে গত বছর লোকসভা ভোটের পরেই তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন। তাঁর দাদাও দল বদল করেন বিজেপি-র একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। এলাকায় তাঁর দাপট যথেষ্ট বলে স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘নুরুল ইসলাম দলে যোগ দিয়েছিলেন কিনা বলতে পারব না। তবে, মনিরুল যখন যোগ দিয়েছেন, তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে তিনিও দিয়েছিলেন।’’
এ ব্যাপারে ফোন করে বা এসএমএস পাঠিয়েও মনিরুল ইসলামের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। লাভপুরে তিন সিপিএম সমর্থক ভাইকে খুনের মামলায় গত বছর ডিসেম্বরেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে মনিরুলের নাম উল্লেখ করেছে পুলিশ। এ বার গ্রেফতার মনিরুলের দাদা ও ঘনিষ্ঠ। শ্যামাপদের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে নিয়ে এই সব করছে। না হলে এতদিন কোথাও কিছু হল না, ওরা আমাদের দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সব হতে শুরু করল!’’
তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশ নিজের কাজ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy