সায়নদীপা সরকার। নিজস্ব চিত্র।
বিয়ে বন্ধ করতে নাবালিকা বান্ধবীকে নিয়ে সোজা হাজির হয়েছিলেন বিডিও-র কাছে। গৃহহীনের জন্যও ছুটেছেন প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে। শুধু তা-ই নয়, কখনও দুঃস্থ শিশুদের বই-খাতা, পেন-পেন্সিল থেকে পোশাক-আশাক দিয়ে আসছেন। কখনও বা গরিব মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। নিজের পড়াশোনার ফাঁকে এভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল বলে পরিচিত রানিবাঁধ এলাকার তরুণী সায়নদীপা সরকার।
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেএনএম নার্সিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর বাড়ি রানিবাঁধ থানার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে। পেশায় স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা বাবা-মায়ের কাছেই ছোট থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা তৈরি হয় তাঁর মধ্যে।
সায়নদীপার কথায়, ‘‘তখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। গরমে দুপুরে রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধকে তৃষ্ণায় কাতরাতে দেখে কাছে থাকা এক বান্ধবীর বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি জল এনে তাঁকে দিয়েছিলাম। সে জন্য পড়শিরা প্রশংসা করেছিলেন। তার পর থেকে মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছাটা বেড়ে যায়। সেই থেকে অসহায়, দুঃস্থ, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।’’
তিনি জানান, নিজের হাত খরচের সঙ্গে সঙ্গী নন্দিতা মণ্ডল, সৌরভ প্রামাণিক, সৌমেন মণ্ডল-সহ কয়েকজনের সহযোগিতা নিয়ে গরিবদের নতুন পোশাক, দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য খাতা, পেন ইত্যাদি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবা করার ইচ্ছা থেকেই আমি নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ বেছে নিয়েছি। চাকরির বেতন থেকেও অসহায় মানুষদের সেবা করে যাব।’’
রানিবাঁধ আশ্রম পাড়ার বাসিন্দা প্রৌঢ় সত্যকিঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আমার ঘর নেই। তা শুনে ওই মেয়েটা আমাকে বিডিও-র কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ওর জন্যই হয়তো এ বার আমি নিজের একটা ঘর পাব।’’
সায়নদীপার বাবা চিত্তরঞ্জন সরকার রানিবাঁধের বেঠুয়ালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় বেঠুয়ালা গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের এক মাত্র সন্তানের এই মানসিকতায় আমরা গর্বিত।’’
বিডিও (রানিবাঁধ) শুভদীপ পালিত বলেন, ‘‘ওই তরুণী নিজের উদ্যোগে অসহায়দের পাশে পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক বার তিনি বিভিন্ন অসহায় মানুষের সমস্যা নিয়ে এসেছেন। ওঁকে সাধ্যমতো সাহায্য করি।’’
ওই তরুণীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন, ‘‘সায়নদীপার পরোপকারে এগিয়ে আসা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তাঁর মতো জঙ্গলমহলের মেয়েরা এগিয়ে যেতে চাইলে, আমি সব সময়ে পাশে থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy