Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

মদ আর ফাটকার নেশায় বিপুল দেনা, ডাকাতির ছক কষে ধৃত স্কুল শিক্ষক

পুলিশের দাবি, দূর থেকে তা বুঝতে পেরে, কোনও ভাবে মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দহলা গ্রামের অদূরে  পড়ে যান শান্তনু। সেই সময়ে কোমরে গোঁজা পিস্তল ছিটকে পড়ে যায়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খাতড়া শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

আনলাইনে শেয়ার কেনাবেচা, বেআইনি লটারি, আর মদের নেশায় বাজারে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে, কোনও কারণ না দেখিয়ে দিনের পর দিন স্কুল কামাই করায় অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেতন। পুলিশের দাবি, দেনায় জর্জরিত হয়ে বেআইনি কারবারের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন খাতড়ার বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দা বছর তেত্রিশের শান্তনু মাহাতো ওরফে বাবলু। শুক্রবার রাতে একটি দেশি পিস্তল-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল শান্তনু ও তাঁর সঙ্গীকে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে, রবিবার রাতে ধরা হয় দুর্গাপুরের প্রান্তিকা কলোনির সিকান্দর মল্লিককে। পুলিশের দাবি, সিকান্দারের থেকেই অস্ত্র কেনেন শান্তনু। কার্তুজ কিনতেন তার থেকেই।

খাতড়া থানার পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাতে খাতড়া শহরের একটি গয়নার দোকানে ডাকাতির মতলবে কিছু দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চড়ে সিমলাপালের দিক থেকে আসবে বলে গোপন সূত্রে খবর ছিল। সেই মতো দহলা এবং সাবুবাইদ মোড়ের কাছে ওঁত পেতে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। পুলিশের দাবি, দূর থেকে তা বুঝতে পেরে, কোনও ভাবে মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দহলা গ্রামের অদূরে পড়ে যান শান্তনু। সেই সময়ে কোমরে গোঁজা পিস্তল ছিটকে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পিস্তল-সহ ধরে ফেলা হয় শান্তনুকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই রাতে খাতড়ার শালুকা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় লাল্টু বাউড়ি নামে এক যুবককে। বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে রুজু হয় মামলা। শনিবার আদালতে দু’জনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।

পুলিশের দাবি, শান্তনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিকান্দরের কথা জানা যায়। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, গত এপ্রিলে বছর তেত্রিশের সিকান্দরের থেকে ২২ হাজার টাকা দিয়ে ওই দেশি পিস্তলটি কেনেন শান্তনু। পিস্তল কেনার পরে দু’-চার বার সিকান্দরের থেকে কার্তুজও কিনেছেন। সম্প্রতি মোবাইলে মেসেজ করে আরও কার্তুজ চান শান্তনু। সেই মেসেজ দেখার পরেই রবিবার রাতে ওই যুবককে দুর্গাপুর থেকে গ্রেফতার করে আনা হয়।

সোমবার এই ঘটনায় ধৃত তিন জনকেই খাতড়া আদালতে তোলা হয়েছিল। সরকার পক্ষের আইনজীবী সন্দীপ দে জানান, সিকান্দরের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৭ নভেম্বর তাঁকে ফের আদালতে তোলা হবে। এ দিন শান্তনু ও লাল্টুর জামিন মঞ্জুর হয়নি। তাঁদের ১১ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ২২ নভেম্বর ফের ওই দু’জনকে আদালতে তোলা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, সিকান্দরের কাছে আরও পিস্তল রয়েছে কি না, কোথা থেকে কী ভাবে সে পিস্তল পেত— তা জেরায় জানার চেষ্টা করা হবে। এ দিন আসামি পক্ষের আইনজীবী অসীম গোপ অবশ্য দাবি করেন, তাঁর মক্কেলরা নির্দোষ। তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, শান্তনু বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে তদন্তে তাঁরা জেনেছেন। স্কুলের সহকর্মীদের থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিলেন। তার বাইরেও ধারদেনা ছিল আরও। হিড়বাঁধ ব্লক এলাকার যে স্কুলের শিক্ষক শান্তনু, সেটির প্রধান শিক্ষক অরূপ পাঠক বলেন, ‘‘২০১১ সালে ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন উনি। প্রথম কয়েক বছর নিয়মিত স্কুল করলেও পরে ছুটি না নিয়ে দিনের পর দিন কামাই করেছিলেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত ভাবে জানানো হয়।’’ দীর্ঘ দিন স্কুলে না আসায় গত দেড় বছর ধরে শান্তনুর বেতন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Robbery Police Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy