Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বকেয়া বিল চেয়ে অবস্থানে বসলেন মাতৃযান চালকেরা

এক দিকে লক্ষাধিক টাকার বিল বকেয়া, অন্য দিকে, কাজ হারানোর আশঙ্কা— এই দুই সমস্যা সমাধানের দাবিতে পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করলেন জেলার নিশ্চয়যান ও মাতৃযান প্রকল্পের চালকেরা।

ক্ষোভ: পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ: পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
Share: Save:

এক দিকে লক্ষাধিক টাকার বিল বকেয়া, অন্য দিকে, কাজ হারানোর আশঙ্কা— এই দুই সমস্যা সমাধানের দাবিতে পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করলেন জেলার নিশ্চয়যান ও মাতৃযান প্রকল্পের চালকেরা। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়ির চালক ও মালিক অবস্থানে বসেন। পরে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

পুরুলিয়ার জেলা সদরের দেবেন মাহাতো হাসপাতাল, রঘুনাথপুরের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কমবেশি ২৫০টি নিশ্চয়যান ও মাতৃযান চলে। বিনামূল্যে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও এক বছর বয়স পর্যন্ত অসুস্থ শিশুদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে আনা হয় এই নিশ্চয়যানে। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে প্রসূতি ও শিশুদের বাড়িতে পৌঁছনোরও ব্যবস্থা আছে এই নিশ্চয়যানে। প্রয়োজনে ব্লক হাসপাতাল থেকে জেলা সদর বা মহকুমা স্তরের হাসপাতাল পৌঁছনো হয়।

এ দিন দুপুরে অল বেঙ্গল নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর্স ইউনিয়নের পুরুলিয়া জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেন ওই নিশ্চয়যানের মালিক ও চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, গত আট মাসের বিল এখনও বকেয়া রয়েছে। বারবার দাবি জানিয়েও বিল পাচ্ছেন না তাঁরা। এরই মধ্যে তাঁদের গাড়ি বাদ দিয়ে হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থার গাড়ি এ বার থেকে নিশ্চয়যান হিসাবে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। খুব দ্রুত ওই সংস্থার গাড়ি বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন ওই সংগঠনের কর্মকর্তারা।

তাঁদের মধ্যে কেন্দা থানার রাহুল দাস, পুরুলিয়া সদরের শান্তনু মুখোপাধ্যায়, হুড়া থানার আমরুল দর্জি, বরাবাজারের দেবব্রত সিংহ বলেন, ‘‘গত কয়েকমাস আগেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকেই জেনেছিলাম এ বার থেকে নিশ্চয়যান চালাবে হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থা। তখনই আমরা যোগাযোগ করেছিলাম মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে। কিন্তু সেই সময়ে আমাদের জানানো হয়েছিল কোনও বেসরকারি সংস্থা এই নিশ্চয়যান চালাবে না।” নিশ্চয়যানের চালক ও মালিকদের দাবি, সম্প্রতি ওই বেসরকারি সংস্থা পুরুলিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে গাড়ি চালানোর জন্য স্থানীয় কয়েকজন চালককে নিয়োগ করেছে। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে নিশ্চয়যান চালালে আড়াইশো জন যুবক কাজ হারাবেন। তাঁদের দাবি, আগে বহুবার তাঁরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে কাজের নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের দাবি গ্রাহ্য করা হয়নি বলে অভিযোগ। তবে বেসরকারি সংস্থা নিশ্চয়যান চালাবে এই মর্মে কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই বলে পাল্টা দাবি করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

এরই মধ্যে জেলার আড়াইশোটি নিশ্চয়যানের প্রায় সব ক’টিরই গত সাত-আট মাসের বিল বকেয়া থাকায় তাঁরা সঙ্কটে পড়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। গাড়ি মালিকেরা জানাচ্ছেন, অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থ নবজাতকদের বাড়ি থেকে হাসপাতাল বা হাসপাতাল থেকে বাড়ি পৌঁছনোর জন্য গাড়ির তেল ও চালকদের বেতন প্রথমে তাঁদের দিতে হয়। পরে সেই খরচের বিল জমা দিলে টাকা পাওয়া যায়। আট মাস আগে জমা দেওয়া বিল আটকে থাকায় তাই তাঁরা ফাঁপড়ে পড়ে গিয়েছেন।

পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘হাসপাতালের নিশ্চয়যানগুলি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালানো হবে এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। জানি না নিশ্চয়যানের চালকেরা সেই খবর কোথা থেকে পেয়েছেন।” বকেয়া বিল মেটানোর বিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘নিশ্চয়যানের বকেয়া বিলের নথি রাজ্যে স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। টাকা এলেই বকেয়া বিল মিটিয়ে দেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Matrijan Drivers Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE