Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Ambulance

প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স পেতে ‘হন্যে’

বাঁকুড়া মেডিক্যালের পাশেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের হোক বা বেসরকারি সংস্থার— অ্যাম্বুল্যান্স পেতে হয়রানির অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয়নি। কেন এই সমস্যা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। সম্প্রতি মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতিকে বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়া থেকে উদ্ধার করে তাঁকে বাড়িতে ফেরান বেলিয়াতোড়ের দুই যুবক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৫:১৭
Share: Save:

বৃষ্টির রাতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল থেকে বাড়িতে ফেরাতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁর সঙ্গীরা। প্রসূতিদের জন্য নিখরচার অ্যাম্বুল্যান্স পেতে টোল-ফ্রি নম্বর ১০২-এ বারবার ফোন করেও গাড়ি মেলেনি বলে অভিযোগ। হাসপাতালেও ছিল না নিখরচার নিশ্চয়যানের অ্যাম্বুল্যান্সও। এই পরিস্থিতিতে মোটা টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া দিয়েই প্রসূতিকে বাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছে বলে দাবি তাঁর সঙ্গীদের। পুরো বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় সামনে এসে পড়েছে, বাঁকুড়া মেডিক্যালে রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স পেতে দুরাবস্থার কথা।

বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘১০২ টোল ফ্রি নম্বরের অ্যাম্বুল্যান্স রাখার জন্য হাসপাতালে আলাদা জায়গা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও এই প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না বলে হামেশাই অভিযোগ উঠছে। বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনকে জানানোর চিন্তা-ভাবনা করছি।’’

সম্প্রতি মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতিকে বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়া থেকে উদ্ধার করে তাঁকে বাড়িতে ফেরান বেলিয়াতোড়ের দুই যুবক। তাঁর সুবিধা-অসুবিধার খেয়াল রাখছেন বেলিয়াতোড় যামিনী রায় কলেজের এনসিসি ইউনিটের সদস্যেরা। রবিবার প্রসূতির পেটে যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। সঙ্গীদের দাবি, মহিলার শারীরিক পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, এখনই সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা নেই। তাই সোমবার রাতে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।

বাড়ি ফেরাতে মেডিক্যালে যান বেলিয়াতোড় যামিনী রায় কলেজের এনসিসি ইউনিটের প্রাক্তন ক্যাডেট হারাধন কর্মকার ও মৃত্তিকা দাস। হারাধনের দাবি, ‘‘হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে ছুটি দেওয়ার পরে ১০২ ‘টোল ফ্রি’ নম্বরে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য পাঁচ বার ফোন করি। প্রতি বারই জানানো হয়, বাঁকুড়া মেডিক্যালে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে পারবে না। মেডিক্যালে তাঁদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। যদিও মেডিক্যালের কর্মীরা জানান, ‘১০২ টোল ফ্রি’-র অ্যাম্বুল্যান্সের অফিস সেখানে নেই। পরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করি। কিন্তু বাঁকুড়া থেকে বড়জোড়ায় প্রসূতির গ্রাম পর্যন্ত মাত্র ৪৭ কিলোমিটার যেতে ওই চালক ২,৬০০ টাকা ভাড়া চান। বারবার অনুরোধ করেও ভাড়া কমানো যায়নি। ওই চালক দাবি করেন, রাতে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বেশি। যদিও কোথাও ভাড়ার তালিকা নজরে আসেনি। শেষে বেশি ভাড়া দিয়েই প্রসূতিকে তাঁর বাড়িতে দিয়ে আসি।’’

হারাধন ও মৃত্তিকার আক্ষেপ, মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতিকে নিয়ে বৃষ্টির রাতে জল-কাদা মেখে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে তাঁদের অন্তত দু’ঘণ্টা গোটা মেডিক্যাল চত্বর ঘুরতে হয়েছে। অথচ, নিখরচায় প্রসূতি ও শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স প্রকল্প চালু করেছে সরকার। একটি ‘১০২ টোল ফ্রি’ এবং অন্যটি ‘নিশ্চয়যান’। বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি থেকে তেমনই অ্যাম্বু্ল্যান্সে প্রসূতিকে বাঁকুড়ায় আনা হয়েছিল। অথচ, ফেরার সময়ে পাওয়া গেল না।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দু’টি প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে থাকার কথা। তা হলে কেন সোমবার বৃষ্টির মধ্যে প্রসূতি সরকারি প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স পেলেন না? ‘নিশ্চয়যান’ প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক বাপ্পা রায় বলেন, “হাসপাতাল থেকে সাধারণত বিকেল ৫টা-সাড়ে ৫টার মধ্যেই রোগীদের ছুটি দেওয়া হয়। তাই ওই সময়ের পরে আমাদের গাড়ি আর হাসপাতালে থাকে না। আমাদের সঙ্গে রোগীদের যোগাযোগের কোনও বিশেষ মোবাইল নম্বরও নেই। তাই ওই সময়ের পরে ‘১০২ টোল ফ্রি’-ই পরিষেবা দেয়।”

এ দিকে ‘১০২ টোল ফ্রি’-র পরিচালনকারী সংস্থার বাঁকুড়ার ইনচার্জ বামদেব চট্টোপাধ্যায় সোমবার রাতে অ্যাম্বুল্যান্স না দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “১০২ টোল ফ্রি নম্বরে যে কেউ ফোন করলে অবশ্যই অ্যাম্বুল্যান্স মিলবে। সমাজমাধ্যমে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা ঠিক নয়। তা ছাড়া, কেউ জোর করে ছুটি করিয়ে নিয়ে গেলে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে পারেন না।” হারাধনের দাবি, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই আমাদের ডেকে রাতে রোগীকে ছুটি দিয়েছেন। আমরা জোর করে নিয়ে যাইনি।’’

ব্যক্তিগত অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়াই বা অত বেশি কেন চাওয়া হল?

‘গোবিন্দনগর ট্যাক্সি ওনার্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক বুলবুল সর্দার বলেন, “হাসপাতাল থেকে বজড়োড়ার ওই গ্রামে যাওয়া-আসার ভাড়া কোনও ভাবেই ২,৬০০ টাকা হতে পারে না। এটা নিয়মবিরুদ্ধ কাজ হয়েছে। ওই যাত্রীরা ফোন করে ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালককে আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”

কিন্তু কেন অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হয়রানি বন্ধ করা যাচ্ছে না?

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy