Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
RG Kar Medical College And Hospital Incident

এত অন্ধকার কেন

তিন মাসেও চার্জশিট দিতে না পেরে বা না দিয়ে এবং মামলার দুই ‘বড় মাপ’-এর অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের কোনও বিরোধিতা না করে সিবিআই সেই সংশয়তিমিরের অন্যতম প্রধান স্রষ্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:২৩
Share: Save:

যে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না, সেই বিষয়ে কিছুই বলা উচিত নয়— এই আপ্তবাক্য যদি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়, তবে আর জি কর হাসপাতালে ৮-৯ অগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার তদন্ত তথা বিচার প্রক্রিয়ার বর্তমান গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে মৌন অবলম্বন ছাড়া উপায় থাকে না। সমগ্র প্রক্রিয়াটি ঘিরেই আপাতত নাগরিকের মনে রকমারি সংশয় এবং বিস্ময়ের বাষ্প উত্তরোত্তর ঘনীভূত হয়ে চলেছে। তিন মাসেও চার্জশিট দিতে না পেরে বা না দিয়ে এবং মামলার দুই ‘বড় মাপ’-এর অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের কোনও বিরোধিতা না করে সিবিআই সেই সংশয়তিমিরের অন্যতম প্রধান স্রষ্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গত করছে অভিযোগকারীদের একাধিক আইনজীবীর মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা, বিশেষত তার পিছনে ‘পরিস্থিতি’ এবং ‘হস্তক্ষেপ’-এর প্রচ্ছন্ন অভিযোগ। অন্য দিকে, তদন্ত এবং বিচার অনেক ক্ষেত্রেই সময়সাপেক্ষ, দীর্ঘ সময় ধরে জামিন না-দেওয়া সুবিচারের পরিপন্থী, চার্জশিট যথেষ্ট জোরদার হওয়ার আগে তা পেশ করলে তদন্তের ক্ষতি হয়— এই সব যুক্তিকে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। অতএব এই গভীর অন্ধকার না কাটা অবধি মামলার হাল নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করা বিধেয় নয়, সঙ্গতও নয়।

কিন্তু এত অন্ধকার কেন? এই প্রশ্নটুকু না তুললে বড় রকমের অন্যায় হবে। কেবল নিহত চিকিৎসকের স্বজনবান্ধবের প্রতি নয়, অন্যায় হবে গোটা সমাজের প্রতি। আর জি করের ঘটনাটিকে আজ আর একটি যে কোনও ঘটনা হিসাবে গণ্য করার কোনও উপায় নেই। ওই ভয়াবহ অঘটনকে উপলক্ষ করে যে বিপুল জনজাগরণ ঘটেছিল তার প্রত্যক্ষ ফল হয়তো সীমিত, এমনকি আজ সেই সামাজিক আন্দোলনকে আপাতবিচারে বহুলাংশে নিষ্ফল বলেও মনে হতে পারে, কিন্তু সামাজিক চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ এবং কার্যত স্বতশ্চালিত সংগঠনের এই অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে বহু নাগরিকের চেতনায় গভীর ছাপ রেখেছে, গণতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের পক্ষে যা এক বিরাট সম্পদ। ঠিক সেই কারণেই নাগরিকরা দাবি করতে পারেন, তাঁদের অন্ধকারে রাখা চলবে না। ক্ষমতার অধীশ্বররা নিজেদের পথে চলবেন আর নাগরিক সমাজ অসহায় ভাবে বিচারের অপেক্ষায় থাকবেন— এটা প্রকৃত গণতন্ত্রের ধর্ম নয়। তিন মাসের লাগাতার সামাজিক আন্দোলনের পর্বান্তর ঘটেছে, অনিবার্য ভাবেই। কিন্তু নাগরিকদের জানবার দাবি এখনও সমান সত্য, সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বিচারালয়ের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই দাবি জানাবার অধিকার নিশ্চয়ই নাগরিকের আছে, তবে তাঁদের সংশয় দূর করার প্রধান দায় প্রশাসনের। প্রথমত, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রে সরকারের চালকরা জনসাধারণের প্রতিনিধি তথা অছি, সেই কারণে এমন একটি গুরুতর বিষয়ে জনসাধারণকে তদন্ত ও বিচারের ব্যাপারে যথেষ্ট ভরসা দেওয়া তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু আরও অনেক বড় কথা হল, এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে গভীর এবং ব্যাপক সংশয় সৃষ্টির পিছনে প্রশাসনের ভূমিকাই অতিমাত্রায় প্রবল। হত্যাকাণ্ডের আদিপর্ব থেকে শুরু করে হাসপাতালের আধিকারিক, পুলিশের কর্তা এবং সামগ্রিক ভাবে রাজ্য প্রশাসন তথা শাসক শিবিরের আচরণে ক্রমাগত সত্য গোপন করার এবং অপরাধের বিস্তীর্ণ চক্র ও তার কারিগরদের প্রশ্রয় দেওয়ার অগণিত অভিযোগ উঠেছে। আদালত একেবারে শুরুতেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে তদন্তের ভার তুলে দেওয়ার ফলে রাজ্য প্রশাসন সম্পর্কে সংশয় অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাজের নমুনাও বিশেষ ভরসা দিতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতেই নতুন করে শোনা যাচ্ছে: ‘পথে নেমেই বিচার আদায় করতে হবে’। নাগরিক সমাজের এই ধারণা স্পষ্টতই উঠে আসে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর অনাস্থা থেকে। এই অনাস্থা গভীর উদ্বেগের কারণ। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে যাঁরা চালকের আসনে, অনাস্থা দূর করার দায়িত্ব তাঁদের উপরেই বর্তায়।

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Protest Junior Doctors RG Kar Medical College and Hospital Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy