কাল্পনিক: এমনই হবে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র
আখাম্বা বহুতল ঠিক পছন্দ ছিল না রবীন্দ্রনাথের। খানিক খোঁচা দিয়েই বলতেন, ‘আকাশ-আঁচড়া বাড়ি’!
কবির শান্তিনিকেতনের কাছে রাজ্য সরকারের সাধের বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর স্থাপত্য-ভাবনাই কার্যত সৃজনমন্ত্র। ইলামবাজারের পথে বোলপুরের শিবপুরে ক্যাম্পাস ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের। স্থপতিরা বলছেন, ওই তল্লাটে কোনও বাড়িই গাছেদের মাথা ছাড়াবে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও নান্দনিক প্রাকৃতিক পরিবেশ অটুট রাখাই লক্ষ্য।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের কথায়, ‘‘রবীন্দ্র-ভাবনায় নকশা তৈরির জন্য স্থপতিদের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা হয়েছিল। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কারা গড়বে, সেটা ঠিক হয়েছে তার পরেই।’’ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রূপকার এক স্থপতি গোষ্ঠীই বোলপুরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। তাদের কর্ণধার দীক্ষু কুকরেজা বলছেন, ‘‘বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট ছোট বাড়িতে ছড়িয়ে খোলামেলা পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। বেঙ্গল স্কুলের শিল্পীদের চিত্রঘরানার মিশেলে সেজে উঠবে ক্যাম্পাস। বড় হ্রদ, গাছপালারও কমতি থাকছে না।’’
বোলপুর থানা এলাকার শিবপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য কিছু ক্ষোভ রয়েছে। জমিহারাদের আন্দোলন ছাড়াও বিশ্বভারতীর এত কাছে ফের একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়া নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তবে সরকারি সূত্রের দাবি, ২৫ একর জমিতে এই নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র চাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তাতে সাড়াও মিলেছে। কাজ শুরুর প্রাক্কালে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি তরফে খাতায়-কলমে প্রকল্পের খরচ এখনও বলা হচ্ছে না। তবে সূত্র জানাচ্ছে, কমবেশি ৪০০ কোটি টাকায় পাঁচ লক্ষ বর্গফুটের নির্মাণকাজ সারা হবে। গড়ে উঠবে ২৪টি বাড়ি। কাজ শেষের সময়সীমা ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর।
স্থাপত্য রীতি শিক্ষাঙ্গনে উৎকর্ষের উপাদান হয়ে ওঠে কী ভাবে, ১০০ বছর আগে শান্তিনিকেতনে সেটা ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গত কয়েক বছরে রাজ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও নান্দনিকতার দিকটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। কিছুটা ব্যতিক্রম, নিউ টাউনে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। স্থপতি অবিন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সেখানে ১০ একর জমিতে ১৮০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। অবিনবাবু বলেন, ‘‘কম জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য লম্বালম্বি বহুতলে ভার্টিক্যাল গুরুকুলই সমাধান।’’ বোলপুরের কাজটা অন্য ঘরানার। পরিসরও বড়। মায়াবতীর জমানায় উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় ৫০০ একরের গৌতম বুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়েও কুকরেজাদের হাতযশ ছড়িয়ে আছে। মায়াবতীর তৎপরতায় অত বড় কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল সাড়ে তিন বছরে। বোলপুরের প্রকল্প সময়ে শেষ করার তাগিদ আছে রাজ্যেরও। তাগিদটা ভাবমূর্তি রক্ষার। নান্দনিক সৃষ্টি এবং স্থানীয় ক্ষোভ ঠেলে কাজ সারা— দু’টিই এখন মাথাব্যথা রাজ্যের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy