Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Eye Donation

প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার নবদম্পতির

রবিবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুরের লোবা পঞ্চায়েত এলাকার কোটা গ্রামে বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী পার্থসারথি রায়ের।

বার্তা: প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে নবদম্পতি। নিজস্ব চিত্র

বার্তা: প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে নবদম্পতি। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৮
Share: Save:

মৃত্যুর পর যেন তাঁদের চোখ দিয়েই পৃথিবীর আলো, রং, রূপকে অনুভব করার সুযোগ পান অন্য কেউ। মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করে নিজেদের বিয়ের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানকে এ ভাবেই স্মরণীয় করে রাখলেন এক নবদম্পতি।

রবিবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুরের লোবা পঞ্চায়েত এলাকার কোটা গ্রামে বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী পার্থসারথি রায়ের। আর পাঁচটা বিয়েবাড়ির মতোই ফুল ও আলো দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল পার্থদের বাড়ি। বাজছিল সানাই। নবদম্পতি পার্থ ও অনন্যা অপেক্ষায় ছিলেন অতিথিদের। সন্ধ্যায় একে একে আসতে শুরু করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। একটা জমকালো পরিবেশ। সেই সময় দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটির গাড়িটা ঢুকতেই আর পাঁচটা বিয়ে বাড়ির সঙ্গে তফাত গড়ে দিল ওই অনুষ্ঠান বাড়ির।

গাড়ি থেকে নামলেন দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটির সদস্যরা। তাঁদের সামনেই নব দম্পতি মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করলেন। নথিপত্রের কাজ সারা হলে, যে দু’টি অঙ্গীকারপত্র দেওয়া হল। সেটা ছেলে ও বৌমার হাতে নিজেরাই তুলে দিলেন পার্থসারথির বাবা-মা ব্রজনারায়ণ রায় ও বীণাপানি রায়েরা। নিজেদের বিয়ের মুহূর্তকে একেবারে অন্যধারার স্মরণীয় করে রাখতে পুত্র ও পুত্রবধূর এমন উদ্যোগকে সম্মান জানানো যেন।

কিছুদিন আগেই গোহালিয়াড়া গ্রামে আশিস অধিকারী ও প্রীতিকণা অধিকারীর মেয়ে অনন্যার সঙ্গে ছেলের বিয়ে ঠিক হয়। পার্থ ও অনন্যার এই সিদ্ধান্তে সায় ছিল তাঁদের অভিভাবকদেরও। ঠিক হয়, বৌভাতের দিনই শুভকাজটা সেরে ফেলবেন। তারপরই দুর্গাপুরের ওই সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন দম্পতি।

বিয়ের প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান আর নতুন জীবন শুরুর মুহূর্তে এমন অনন্য নজির তৈরি করা ওই নবদম্পতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ নিমন্ত্রিতরা থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ সকলেই। নতুন প্রজন্মের এমন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সোসাইটির কর্মকর্তারাও। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কাজল রায় বলছেন, ‘‘আমাদের সোসাইটি ৮৬ সাল থেকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। দুর্গাপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বীরভূমের বিস্তৃত এলাকায় কাজ করে আমাদের সংস্থা। এ পর্যন্ত বিয়ের আসরে কোনও নবদম্পতি মরণোত্তর চক্ষুদান অঙ্গীকার করছেন এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। খুব খুশি হয়েছি।’’

কেন এমন ভাবনা? পার্থ বলছেন, ‘‘কলেজ জীবনে এনসিসি করেছি। ইচ্ছে ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করব। সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। অন্য চাকরি পেলেও সমাজের প্রতি তো একটা দায়িত্ব থাকে। সেই বোধ থেকেই মরণোত্তর চক্ষুদানের ভাবনা। মৃত্যুর পর আমার এই চোখ দিয়ে কেউ দৃষ্টি ফিরে পাবেন।’’ অনন্যা বলছেন, ‘‘পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও আমাদের চোখ পৃথিবীর আলো দেখাতে পারবে অন্যকে।’’

দুই পরিবারের অভিভাবকেরা বলছেন, ‘‘ওরা খুব ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা খুশি।’’ দুর্গাপুরের ওই সোসাইটির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকারের জন্য এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ১৯ সালে ৩৮৬টি কর্নিয়া সংগৃহীত হয়েছে। চলতি বছরে ৭৬টি। কিন্তু সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। পার্থসারথি অনন্যাদের মতো তরুণরা এগিয়ে এলে পরিস্থিতি বদলাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Donation Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE