ইন্দাস থানার ঈশ্বরপুরের বাসিন্দা মহাদেব দাস বৈরাগ্য (৬২) ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী চন্দনা দাস বৈরাগ্যর (৪৩) খুনের ঘটনায় সম্পত্তি-বিবাদ রয়েছে বলেই পুলিশের সন্দেহ। প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল মহাদেববাবুর।
ওই জোড়া খুনের ঘটনায় মহাদেববাবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া বৈরাগ্যকে শুক্রবার রাতে এবং ছেলে রাধাকান্তকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, জেরায় নিহতের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তাঁর ছেলে পুলিশের কাছে ওই দু’জনকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
ওই আধিকারিকের কথায়, “প্রথম পক্ষের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও চন্দনা দাস বৈরাগ্য নামে এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে বিয়ে করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মহাদেববাবু। ঘটনাটি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তাঁর প্রথম স্ত্রী এবং ছেলে। কয়েকদিন ধরেই মহাদেববাবুর সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী ও রাধাকান্তের গণ্ডগোল শুরু হয়েছিল। তারই জেরে বৃহস্পতিবার রাতে মহাদেববাবু ও চন্দনাদেবীকে রাধাকান্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে খুন করে বলে ধৃতেরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।
খুনের পরেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন নিহতের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে। প্রথমে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীকে, পরে রাধাকান্তকে ঈশ্বরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করতে চায় পুলিশ।’’
গত শুক্রবার সকালে ঈশ্বরপুর গ্রামের বাড়ির আঙিনায় পড়েছিল মহাদেববাবু এবং চন্দনাদেবীর ক্ষতবিক্ষত দেহ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেহ দু’টি উদ্ধার করে। ওই রাতেই নিহতের ভাই শম্ভুনাথ দাস বৈরাগ্য ইন্দাস থানায় তাঁর বৌদি বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী ও ভাইপো রাধাকান্তের বিরুদ্ধে দাদাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতিকে যে বাড়িতেই খুন করা হয়েছে তা প্রাথমিক তদন্তের পরেই বোঝা গিয়েছিল। তখন থেকেই পুলিশ সন্দেহ করে এই ঘটনার পিছনে নিহতের বেপাত্তা হয়ে যাওয়া প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে যুক্ত। ওই রাতেই এক আত্মীয় বাড়ি থেকে প্রথমে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীকে ধরা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় তিনি জোড়া খুনের কথা কবুল করে দায় চাপান ছেলের উপরে। শনিবার ঈশ্বরপুর এলাকা থেকেই রাধাকান্তকে গ্রেফতার করা হয়। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে খুনের কথা স্বীকার করেছেন রাধাকান্ত। পুলিশকে রাধাকান্ত জানিয়েছেন, তাঁর বাবা সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। এই নিয়ে বাবার সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিল। সেই সময় চন্দনাদেবী ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁকে গালিগালাজ করায় সে কাটারি দিয়ে প্রথমে চন্দনাদেবীকে কোপাতে শুরু করেন। মহাদেববাবু বাধা দিতে এলে তিনি তাঁকেও কাটারির কোপ মারেন। দু’জন মারা গেলে মাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালান রাধাকান্ত। শনিবার ধৃত বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীকে এবং রবিবার ধৃত রাধাকান্তকে বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের তিনদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy