ব্যস্ততা: পাঁচমুড়ার বাড়িতে সস্ত্রীক বিশ্বনাথবাবু। নিজস্ব চিত্র
পেশায় তিনি শিক্ষক। নেশা টেরাকোটা। তিনি পাঁচমুড়ার বিশ্বনাথ কুম্ভকার। আধকড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর গড়ে তোলা টেরাকোটার দুর্গাপ্রতিমা পা়ড়ি দিচ্ছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আমতলার কাছে, সুকদেবপুরে।
বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামের খ্যাতি টেরাকোটার জন্য। শুক্রবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শেষ বেলার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বিশ্বনাথবাবু। বললেন, ‘‘দিনে ছাত্র পড়াই। আর গত এক মাস ধরে রাত জেগে প্রতিমা তৈরি করেছি।’’ ছেলেবেলায় বাবা নিতাইপদ কুম্ভকারের কাছে মূর্তি গড়ায় হাতেখড়ি। তখন তিনি মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছেন। তার পরে নেশাটা পড়াশোনার চাপে একটু একটু করে থিতিয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৭ নাগাদ হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘চাকরি, সংসার— সমস্ত কিছুর পরেও মনে হচ্ছিল কিছু একটা করতে হবে। নতুন কিছু। নিজের কিছু।’’
কী করবেন, তার জন্য বিশেষ ভাবতে হয়নি। ছেলেবেলার শেখা শিল্পের সঙ্গে বড়বেলার পড়াশোনা মিলিয়ে দিয়েছিলেন শুধু। বাংলার পুতুল শিল্পকে ভিত্তি করে গড়তে শুরু করেন টেরাকোটার ভাস্কর্য। বিশ্বনাথবাবু জানান, প্রতিমা গড়া এই প্রথম নয় তাঁর। এর আগে বিশ্বকর্মা, কালী, সরস্বতী, শিব-দুর্গা গড়েছেন তিনি। প্রদর্শনী করেছেন দিল্লিতে। পেয়েছেন জাতীয় স্তরের পুরস্কার। শিল্পী বলেন, ‘‘তবে সপরিবার দেবীকে ভাস্কর্যে ধারণ করার তৃপ্তিটাই অন্য রকমের।’’
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ হল কী করে?
বৈদ্যবাগান নবপল্লি সার্বজনীনের উদ্যোক্তা শুভঙ্কর মণ্ডল কর্মসূত্রে থাকেন বিষ্ণুপুরে। তিনি বলেন, ‘‘টেরাকোটার গ্রাম বলে পাঁচমুড়ার অনেক নাম শুনেছি। মাস ছয়েক আগে নিজের দেখব বলে গিয়েছিলাম। আর দেখেই ঠিক করি, এ বারে আমাদের মণ্ডপে টেরাকোটার প্রতিমা চাই-ই চাই।’’ যোগসূত্র এটাই। বরাত পেয়ে বিশ্বনাথবাবু তৈরি করেছেন প্রায় ৭ ফুটের দুর্গা প্রতিমা। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী মূর্তিগুলি সাড়ে চার ফুটের। দেখে মুগ্ধ শুভঙ্করবাবু। বলেন, ‘‘যেমনটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও ঢের ভাল।’’
গত এক মাস ধরে বিশ্বনাথবাবুকে সাহায্য করে এসেছেন স্ত্রী সুতপা এবং তাঁদের ছেলে খুদে পড়ুয়া সৌম্যদীপ। অনেক দূরে যাবে প্রতিমা। কিন্তু তার আগে পার হতে হবে পাঁচমুড়া-বিষ্ণুপুর রাস্তা। সংস্কারের অভাবে সেটিকে রাস্তা বলে চেনাই দায়। সুতপাদেবী বলেন, ‘‘রাস্তাটার জন্যই ভয় হয়। এত কষ্ট আর যত্ন দিয়ে গড়া প্রতিমা!’’
দেবীর হাতের অস্ত্র গড়ছেন সাধনায়, এ বার তাঁরা মন দিয়েছেন মোড়কের বর্মে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy