প্রতীকী ছবি।
করোনা রুখতে পরীক্ষা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। রাজ্য সরকারের তরফেও পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার কিছু ব্লকে করোনা পরীক্ষার গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, “পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলিকে চিহ্নিত করে করোনা পরীক্ষার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় লালারসের নমুনা সংগ্রহের কিটের কোনও অভাব নেই। রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য। ফলে, এ নিয়ে কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।”
বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার আওতায় করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২, ওন্দা, মেজিয়া, বড়জোড়া, শালতোড়া, ছাতনা, গঙ্গাজলঘাটি, ইঁদপুর, হিড়বাঁধ, সারেঙ্গা, সিমলাপাল, রাইপুর, তালড্যাংরা, খাতড়া, রানিবাঁধ— এই ১৬টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খাতড়া মহকুমা হাসপাতাল, ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আর বাঁকুড়া পুর স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি, কয়েকটি নার্সিংহোমের তরফেও করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
গত ১৭ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলায় মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১২,৭২৯ জনের। ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিরিখে সব চেয়ে কম পরীক্ষা হয়েছে রানিবাঁধ, তালড্যাংরা এবং সিমলাপালে। ১৭ জুন থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে রানিবাঁধে ২৭১, তালড্যাংরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৭৮ এবং সিমলাপাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৩১৯ জনের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, ওই সময়ের মধ্যে করোনা পরীক্ষার নিরিখে এগিয়ে থাকা ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম বড়জোড়া ও বাঁকুড়া ২। বড়জোড়া ব্লকে ১, ৫৯৯ জনের ও বাঁকুড়া ২ ব্লকে ১,৫৬৬ জনের করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
কেন পিছিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার তিনটি ব্লক?
রানিবাঁধ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুপকুমার পণ্ডা বলেন, “দু’জন টেকনিশিয়ান ও আমি নিজে, মোট তিন জন মিলে লালারসের নমুনা সংগ্রহের কাজ করি। এক জন টেকনিশিয়ান অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজের গতি কিছুটা কমেছে। তবে পরীক্ষার গতি বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছি আমরা।”
সিমলাপাল ও তালড্যাংরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফেও টেকনিশিয়ান কম থাকাকেই পরীক্ষা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন ব্লক স্বাস্থ্য-কর্তারা। ওই দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও দু’জন করে টেকনিশিয়ান রয়েছেন। বাঁকুড়া শহরেও করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। অথচ, শহর এলাকায় পুর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে কেবল ৩৯ জনের পরীক্ষা হয়েছে। বাঁকুড়ার পুরপ্রশাসক তথা বিদায়ী পুরপ্রধান তৃণমূলের মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের পরিকাঠামো সীমিত। শহরের অধিকাংশ মানুষই বাঁকুড়া মেডিক্যালে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন।”
তবে দেড় হাজারের বেশি লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে ফেলা বাঁকুড়া ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাত্র এক জন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তার পরেও এত পরীক্ষার গতি বাড়ছে কী ভাবে? ওই ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবজ্যোতি গোস্বামী বলেন, “টেকনিশিয়ানের বদলে চিকিৎসকদের দিয়ে লালারসের নমুনা সংগ্রহের কাজ করানো হচ্ছে। ব্লকের চার জন মেডিক্যাল অফিসার, চার জন আয়ুর্বেদিক ও হোমিপ্যাথি চিকিৎসক এবং আমি— সবাই মিলে রুটিনমাফিক কাজ করে চলেছি। এলাকায় ট্যাবলো পাঠিয়ে মানুষকে করোনা-পরীক্ষা করানোর বিষয়ে সচেতনও করছি। সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছেন বলেই ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছেন।”
গত কয়েকদিনে বড়জোড়ায় প্রচুর করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে।
বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার এস এন প্রসাদ বলেন, “আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আমরা লালারসের নমুনা সংগ্রহের কাজ
করে চলেছি।”
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, দ্রুত করোনা-পরীক্ষার জন্য রাজ্যের তরফে ‘র্যাপিড টেস্ট’-এর কিট পাঠানো হচ্ছে। জেলার ‘কন্টেনমেন্ট’ এলাকায় সেগুলি কাজে লাগানো হচ্ছে। তা ছাড়া, বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ‘ট্রু ন্যাট’ যন্ত্র বসানো হচ্ছে। যে সব রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচার হবে, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করানো হবে ওই যন্ত্রে। তিনি বলেন, “কোনও ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কি না, ট্রু ন্যাট মেশিনের মাধ্যমে দু’ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা পেশায় চিকিৎসক সুভাষ সরকার বলেন, “পরীক্ষা না বাড়ালে করোনাকে হারানো যাবে না। পরিকাঠামো গড়তে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে যাবতীয় সাহায্য করা হচ্ছে। অথচ, কিছু ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিকের উদ্যোগের অভাবেই এই কাজে গতি আসছে না। স্বাস্থ্য-কর্তাদের উচিত, পরীক্ষা বাড়াতে পদক্ষেপ করা।”
রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, “বাঁকুড়া মেডিক্যালে করোনা-পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে, গতি অনেকটাই বেড়েছে।”
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy