মিছিলে পুরপ্রধান শীলা। নিজস্ব চিত্র
কখনও প্রশাসনের অন্দরে, কখনও হাই কোর্টের এজলাসে— ঝালদা নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে চোখে চোখ রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই লড়াকু মনোভাব পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করবে আশায় বুক বেঁধেছে কংগ্রেস শিবির।
টানা তিন মাস লড়াই চালিয়ে মঙ্গলবার ঝালদা পুরসভার দখল পেয়ে কংগ্রেস কর্মীদের আত্মবিশ্বাস এক ধাপে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশও। তাঁদের মতে, দাবা খেলার মতো একের পর কংগ্রেস ও তৃণমূল শিবির চাল চেলে গিয়েছেন। হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা গড়িয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই লড়াইয়ের ‘চানক্য’ হলেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। তেমনই তাঁকে সঙ্গত দিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী, প্রীতি কর ও দেবায়ন ঘোষ।
এ দিনও হাই কোর্টে ছিলেন নেপাল। তিনি বলেন, ‘‘শুধু একটা পুরসভা দখল করেই আমরা থামছি না। এই লড়াই আমাদের কর্মীদের একের পর এক পঞ্চায়েত ভোটে জেতার রসদ জোগাবে।’’
ঝালদায় কংগ্রেসের লড়াই অবশ্য গত বছরের ১৩ মার্চ, কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু আততায়ীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছিল। দোষীদের খুঁজে শাস্তি দেওয়ার দাবিতে বারবার উত্তাল হয়েছে ঝালদা। কংগ্রেস কর্মীদের পাশে হেঁটেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদেরও একাংশও। এ দিন পুরপ্রধানের শপথগ্রহণের পরে তাই উত্তাল কর্মীদের নিয়ে পুরপ্রতিনিধিরা মিছিল করে সর্বাগ্রে তপন কান্দুর মূর্তিতে গিয়ে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি নির্দলের হলেও পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই জয় তপন কান্দুর হত্যার প্রতিবাদের জয়।’’ তিনি জানান, ঝালদার পুরসমস্যা মেটানোই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।
হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশে সোমবার ঝালদায় পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা প্রশাসন করলেও, সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেনি। তাতে জল্পনা বেড়েছিল। তবে কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধিরা দাবি করেছিলেন, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের নিরিখে পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন শীলা। যদিও তৃণমূল শিবির পুরপ্রধান নির্বাচনের ভোটাভুটিতে ব্যালট দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত অংশ নেয়নি।
এ দিন সকালে হাই কোর্টে প্রশাসন পুরপ্রধান নির্বাচন সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করে। কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী বলেন, ‘‘রিপোর্ট দেখার পরেই বিচারপতি বিকেল ৪টের মধ্যেই জেলাশাসককে শীলা চট্টোপাধ্যায়কে পুরপ্রধান হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাতে নির্দেশ দেন।’’
এরপরেই বিকেল ৪টে নাগাদ শুনশান পুরভবনের চেহারা বদলাতে শুরু করে। একে একে চলে আসেন কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধিরা। আসেন শীলাও। এরপরেই ঢোকেন এসডিও (ঝালদা) ঋতম ঝা। পুরপ্রধানের অফিসের ভিতরে ঠাসা ভিড়ের মধ্যে এসডিও দ্রুত শীলাকে শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে জেলাশাসকের কথা মতো পুরপ্রধান হিসেবে শীলা চট্টোপাধ্যায়কে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়েছে।’’
ততক্ষণে পুরভবন চত্বরে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে কর্মীদের উল্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরপ্রতিনিধিরা শীলাকে নিয়ে নীচে নামতেই ঢাক, ঢোল নিয়ে কংগ্রেস কর্মীরা মিছিল শুরু করেন। শীলার পাশে শুকনো মুখে হাঁটতে দেখে যায় তপনের স্ত্রী পুরপ্রতিনিধি পূর্ণিমা কান্দুকে। মিছিলে বারবার স্লোগান ওঠে, তপন কান্দু জিন্দাবাদ। পঞ্চমুখি মোড়ে তপনের মূর্তিকে একে একে মালা দেন পূর্ণিমা, শীলা-সহ পুরপ্রতিনিধিরা।
পরে পূর্ণিমা বলেন, ‘‘ঘটনার এত দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মানুষ তাঁকে (তপন) ভোলেননি, সেটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, দোষীদের কঠোরতম শাস্তি চাই।’’
এ দিন হাই কোর্টে ছিলেন ঝালদার পুরপ্রতিনিধি বিপ্লব কয়াল। তিনি বলেন, ‘‘তপন কান্দুর মৃত্যুর পর থেকে কংগ্রেস কর্মীরা যে লড়াই শুরু করেছেন, তার একটা বড় জয় এ দিন পাওয়া গেল। তবে ওই হত্যাকাণ্ডের দোষীদের যে দিন শাস্তি দেওয়া হবে, সে দিন আমরা আরও বড় জয় পাব।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল বলেন, ‘‘তপন কান্দুর খুনের প্রতিবাদ শুধু ঝালদার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটে একের পর এক জনপদ দখল করে সুশাসন এনে আমরা তপনকে উৎসর্গ করতে চাই।’’
তবে বিচারপতি অমৃতা সিংহের পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা ডাকা নিয়ে নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে তৃণমূল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শনিবার একটি মামলা করেছিল। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি রয়েছে। সেখানে আবার নতুন কোনও নির্দেশ আসে কি না কিংবা তৃণমূল নতুন করে আর কোনও মামলা করে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেস কর্মীরা।
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘শীলা চট্টোপাধ্যায়কে পুরপ্রধান হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করানো নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশের কথা শুনেছি। তবে এ নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy