—প্রতীকী ছবি।
রাশ টানা যাচ্ছে না কিশোরী প্রসূতির হারে। তার প্রভাবে এক দিকে যেমন জনসংখ্যায় প্রভাব পড়ছে, বাড়ছে মাতৃমৃত্যুও। সম্প্রতি এমনই তথ্য উঠে এসেছে বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে। বাঁকুড়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (৩) সজল বিশ্বাস বলেন, “জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মাতৃমৃত্যুর হার ঠেকাতে কিশোরী প্রসূতির হার অনেকটাই কমিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা জোরদার ভাবে জনসংযোগ ও সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩.৪ শতাংশ। বাঁকুড়া জেলায় তা ১২.৬৪ শতাংশ। এক জন মহিলাপিছু গড় সন্তান রাজ্যে ১.৯৬। বাঁকুড়ায় তা ১.২৪। কিশোরী প্রসূতির হার রাজ্যে ১৭ শতাংশ হলেও বাঁকুড়ায় তা রয়েছে ১৬ শতাংশে। পাশাপাশি, পরিবার পরিকল্পনার অভাবে মাতৃমৃত্যুর হার রাজ্যে প্রতি লক্ষে ১০৩। বাঁকুড়ায় তা ৯৯। আপেক্ষিক ভাবে বাঁকুড়া জেলার পরিস্থিতি রাজ্যের তুলনায় ভাল হলেও তা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়, মত জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেকে মাতৃমৃত্যু, কিশোরী প্রসূতি ও মহিলাপিছু গড় সন্তান—সবই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা বেশি বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। বিশেষ করে, কিশোরী প্রসূতির হার না কমায় বাড়ছে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা।
২০২১-২২ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় পোর্টাল, ইউডাইস-এর তথ্যে দাবি করা হয়, অতিমারি পরিস্থিতিতে বাঁকুড়া জেলায় ১৫.৭ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে। পরের বছরই জেলায় নাবালিকা গর্ভবতীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়তে দেখা গিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অতিমারি পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে জেলা জুড়ে প্রচুর নাবালিকা বিয়ে ঘটেছে। তারই ফল হঠাৎ করে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যাবৃদ্ধি।
নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা জেলায় এখনও তবে কমেনি। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের একটি সূত্রে দাবি, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৯৬টি নাবালিকা বিয়ে রোখা গিয়েছে। তবে এর বাইরে যে অনেক বিয়ে রোখা যায়নি, নিচুতলায় খবর নিলে সেই তথ্য মিলছে। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে নাবালিকাদের ঘরছাড়া হওয়ার ঘটনা বহু আশাকর্মীর নজরে উঠে আসছে। বিভিন্ন থানায় এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করছেন অভিভাবকেরা। জেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্কুলে নাবালিকা বিয়ে রুখতে নানা সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছে। ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পও চলছে।
পরিস্থিতি শুধরোতে ৮-২৪ জুলাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে নানা সচেতনতা কর্মসূচি নিয়েছে বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলা। বিশেষ করে কুড়ি বছর বয়সের পরে প্রথম সন্তান নেওয়া, দ্বিতীয় সন্তান ধারণে অন্তত তিন বছরের ব্যবধান রাখার মতো বিষয়গুলি প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে। ডেপুটি সিএমওএইচ (৩) বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যে আমরা সাব সেন্টার স্তরে বিশেষ প্রচারে জোর দিচ্ছি। আশাকর্মীরা ঘরে ঘরে নজর রাখছেন। তাঁদের কাছে নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই দ্রুত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সচেতন করা হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy