বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব তলব করেছিল ইউনেস্কো। সূত্রের খবর, অভিযোগগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ঐতিহ্যক্ষেত্রে যান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা নিয়ে। দ্রুত বৈঠকে বসে সে চিঠির উত্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শনিবার রাতের গাড়ি-দুর্ঘটনা আরও এক বার ঐতিহ্যক্ষেত্রে যান নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এল। যদিও এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বভারতী।
অভিযোগ, ইউনেস্কো-র চিঠির জবাব দেওয়ারা পরেও শান্তিনিকেতনে আশ্রমের ভিতরে উপাসনা গৃহ থেকে কালিসায়রের রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে এখনও বিশ্বভারতী বা জেলা প্রশাসনকে কোনওরকম পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। যদিও শনি ও রবিবার রাস্তায় গার্ডরেল দিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে কিছুটা যান নিয়ন্ত্রণ করা হয় পুলিশের দাবি।
ওই রাস্তাতে শনিবার রাতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, একটি গাড়ি তীব্র এসে উপাসনাগৃহ সংলগ্ন শান্তিনিকেতনের তালধ্বজের সামনে একটি গাছে সজোরে ধাক্কা মারে। অল্পের জন্য রক্ষা পান গাড়ির চালক-সহ আরোহীরা। গাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকেরই আশঙ্কা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের সীমানা পাঁচিল ভেঙেও ঢুকে যেতে পারত। তা ঘটলে তালধ্বজ, স্থাপত্য, ভাস্কর্যগুলিরও ক্ষতি হতে পারত।
প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এতে হেরিটেজের অংশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। অবিলম্বে ওই রাস্তার উপরে যান নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।” প্রবীণ আশ্রমিক তথা শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, “বার বার আমরা বলে এসেছি, ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ দরকার। যে গতিতে ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে, তা আজ আমাদের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
স্থানীয়েরা জানান, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী উপাচার্য থাকাকালীন এই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের কথা উঠেছিল। রাস্তায় নেমে উপাচার্যকে হাত জোড় করে অনুরোধ করতেও দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল।
এ দিন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, “এ নিয়ে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিকের তরফে একটি রিপোর্ট তৈরি করে কর্মসচিবকে দেওয়া হবে। সে রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করব। একই সঙ্গে হেরিটেজ রক্ষার্থে আমরা বদ্ধপরিকর।” জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে, দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)