রণাঙ্গন: বন্দুক উঁচিয়ে পাহারায় পুলিশকর্মীরা। বুধবার সদাইপুরের সাহাপুর গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র
শাসকদলের অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অত্যাচার চালানোর অভিযোগে আগেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন গ্রামবাসী। এ বার ওই নেতার থেকে ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সদাইপুর থানা এলাকার সাহাপুর গ্রাম। বুধবার সকালে মুড়ি মুড়কির মতো বোমা ফাটল গ্রামে। বোমা ধোঁয়ায় ঢেকে যায় রাস্তাঘাট। পুলিশের সামনেও চলে বোমাবাজি। পরিস্থিতি সামলাতে বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশও।
‘কাটমানি’-র অভিযোগ ঘিরে এর আগেও বারবার তপ্ত হয়েছে বীরভূমের ভিন্ন এলাকা। কিন্তু, এ দিন সাহাপুরে যা হল, তা আগে কখনও হয়নি। এই ঘটনা জেলা পুলিশ-প্রশাসনের মাথাব্যথা আরও বাড়াবে।
গ্রামবাসীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রকল্প থেকে ‘কাটমানি’ নিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন ওই নেতা। এ দিন সেই টাকা ফেরত নেওয়ার জন্যই এনামুলের বাড়ির বাইরে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। অভিযোগ, তাঁর বাড়ি আক্রমণ হতে পারে, এই আশঙ্কায় লোকজন জুটিয়ে বুধবার ভোর থেকেই এলাকায় বোমাবাজি শুরু করেছিলেন শাসকদলের নেতা। গ্রামবাসীকে একজোট হতে দেখে বোমাবাজি আরও বাড়ে। মিলিত প্রতিবাদ করেন গ্রামের মানুষ। বোমা পাল্টা বোমায় এক সময় যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেয় সাহাপুর গ্রাম।
এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গ্রামে প্রচুর পুলিশ। পৌঁছে গিয়েছেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক) অভিষেক মণ্ডল। বোমাবাজি তখন সবে থেমেছে। নেমেছে র্যাফ। এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জটলা। চারদিকে বোমার দাগ। বোমার সুতলি ও স্প্লিন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এনামুল শেখের বাড়ির টিনের চাল ফুটো হয়ে গিয়েছে বোমার ঘায়ে। দেওয়ালেও বোমার চিহ্ন। একই ছবি আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন কমপক্ষে শ’পাঁচেক বোমা ফেটেছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরে বোমা উদ্ধারে লেগেছে।
জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, ওই গ্রামে অশান্তির খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। গোলমাল পাকানোর অভিযোগে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে তাজা বোমা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যেই বোমাবাজি হয়েছে। ঘটনার পর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ৫৭টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে এনামুলের তিন ছেলে ও তাঁর লোকজনই রয়েছে। জনরোষে ফের হামলার মুখে না পড়তে হয়, সে জন্য তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সিদ্ধান্ত হয়নি। গ্রামে পুলিশ পিকেট রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত পাঁচ বছর ধরে শেখ এনামুল ও তাঁর ছেলেদের ‘দৌরাত্ম্যে’ এবং ‘অত্যাচার’-এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ। লোকসভা নির্বাচনের পরেই শাসকদলের নেতাকে ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাবাসীর ক্ষোভের কারণে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন এনামুল। এ দিনও গ্রামবাসীদের বড় অংশ দাবি করেছেন, রাগ দলের প্রতি নয়। বরং নেতার প্রতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বললেন, ‘‘আমাদের এই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষ লোকসভায় তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি নিয়ে বার্তা দেওয়ার পরে আমরা বুকে বল পেয়েছি। তাই দীর্ঘদিন ধরে গরিবের কাছ থেকে কাটমানি নিয়েছেন যে নেতা, তাঁর কাছে এখন টাকা ফেরত চাইছি।’’
পুলিশও মানছে, ওই অঞ্চল সভাপতির প্রতি এলাকার মানুষের ক্ষোভের কথা। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ দিন কোনও ভাবে পরিস্থিতি সামলানো গেল। কিন্তু গ্রামবাসীর ক্ষোভ তো থেকেই গেল। আমাদের ধারণা, সাহাপুর আরও ভোগাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy