এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায়!
পুরুলিয়ার ঝালদা শহর তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস সেন ও কার্যকরী সভাপতি সোমনাথ ওরফে রঞ্জন কর্মকারের লড়াই নিয়ে এমনই টুকরো মন্তব্য ভেসে আসে এলাকায়। দু’জনের রেষারেষি এখন শহরে যেন মুচমুচে চানাচুর! কংগ্রেস থেকে সাত কাউন্সিলর ভাঙিয়ে তাদের হাতে থাকা ঝালদা পুরসভার দখল নিয়েছে তৃণমূল। এলাকায় তাদের প্রভাবও বাড়ছে। কিন্তু, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিছুতেই চাপা থাকছে না শাসকদলে। যা ফের প্রকাশ্যে এল, ওই দুই নেতা আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান ঘিরে।
১৭ অক্টোবর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি ভবনে বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন দেবাশিসবাবু। তার ঠিক ন’দিনের মাথায়, বুধবার সন্ধ্যায় ওই ওয়ার্ডের ওই ভবনেই পাল্টা বিজয়া সম্মিলনী করলেন কার্যকরী সভাপতি সোমনাথবাবু। খিচুড়ি ও কষা মুরগির মাংসের মেনু সহযোগে দেবাশিসবাবুর আয়োজিত সম্মেলনে পুরসভার কাউন্সিলর থেকে শুরু করে তৃণমূলের এক জেলা স্তরের নেতা উপস্থিত হয়েছিলেন। পাল্টা সম্মেলনে দেবাশিসবাবুকে টেক্কা দিয়েছেন সোমনাথবাবু। ভাত, ডাল, আলুপোস্ত, মুরগির মাংসের কষা, মাছ ও চাটনি সহযোগে তাঁর আয়োজনে তুলনামূলক ভাবে নেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও সাধারণ কর্মীদের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে দুই শিবিরের তরজাও তুঙ্গে উঠেছে। যুযুধান দুই নেতাই দোষ চাপাচ্ছেন একে অপরের উপরে।
নিচুতলার কর্মীদের আক্ষেপ, যত দিন যাচ্ছে, এই দুই তৃণমূল নেতার প্রকাশ্য ছায়াযুদ্ধের কথা সধারণ মানুষের কাছেও ক্রমে মুখরোচক হয়ে উঠছে। যতই জেলা নেতৃত্ব শহর কমিটির নেতাদের এক হয়ে চলার নির্দেশ দিন না কেন, দেবাশিসবাবু ও সোমনাথবাবুর মধ্যের বিরোধ মেটার কোনও লক্ষণই নেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, গত বছর পুজোর আগে জেলা নেতৃত্ব শহর কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই এই দুই নেতার মুখ দেখাদেখি কার্যত নেই। দু’জনেই ঝালদা শহরে দু’টি পৃথক কার্যালয় চালান। সেই কার্যালয় থেকেই দলের কাজকর্ম দেখভাল করেন ওই দু’জন। এক নেতা অন্য নেতার কার্যালয়ের ছায়াও মাড়ান না। এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘দু’জনের মধ্যে যেন অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। এক জন কম্বল বিতরণের আয়োজন করেন, তো অন্য জন এক সপ্তাহের মধ্যেই পাল্টা কর্মসূচি নেন। এক জন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে যেই রোগীদের ফল বিলি করলেন, অন্য জন তা জেনেই ফলের ঝুড়ি ও দলবল নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির! এক জন আজ কর্মিসভা করলেন তো দু’দিন পরে আরেক জন কর্মিসভা ডাকলেন।’’ কর্মীদের হয়েছে মুশকিল। হাজিরা দিতে হয় দুই নেতার কর্মসূচিতেই।
২০১৫ সালে পুরসভা নির্বাচনে ঝালদায় দলের বিপর্যয়ের পরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেবাশিসবাবু ও সোমনাথবাবুকে এক সঙ্গে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় তৃণমূলের জেলা ও রাজ্য স্তর থেকে। বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সমীর মাহাতো কর্মীদের কাছে এক হয়ে চলার বার্তা দিতে বিবদমান দুই নেতাকে নিজের দু’পাশে নিয়ে ঝালদায় মিছিলও করেন। কিন্তু, ভোট মিটতেই দু’জনার পথ ফের দু’দিকে।
বুধবার বিকেলে ঝালদায় ড্রাগের ও বেআইনি মদের ঠেক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মিছিল করে জাঁকিয়ে বিজয়ী সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে ঝালদা শহর তৃণমূলের ব্যানারেই। উপস্থিত ছিলেন শহর তৃণমূলের যুব সভাপতি সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন পাল্টা আয়োজন, তার জবাবে সোমনাথবাবু বলছেন, ‘‘দিন কয়েক আগে শহর সভাপতি বিজয়া সম্মিলনী করেও আমাদের ডাকলেন না। কর্মীরা আমাকে বলল, তাঁদের উপেক্ষা করা হয়েছে। কর্মীদের আবদারে ও তাদের সম্মান রাখতেই এই সম্মেলন করা হল।’’ সুব্রতবাবুর বক্তব্য, ‘‘কর্মীরাই দলের সম্পদ। তাঁরা যখন বললেন, ওই (দেবাশিসবাবুর) সম্মেলনে তাঁরা উপেক্ষিত হয়েছেন, তখন আমাদেরও মনে হল কর্মীদের জন্য কিছু একটা করা উচিত।’’
যা শুনে শহর সভাপতি দেবাশিসবাবুর পাল্টা, ‘‘কিছুদিন আগেই সোমনাথবাবু মিছিলের আয়োজন করলেন। কই তখন তো আমাদের কথা মনে হয়নি! উনি নিজের ইচ্ছেয় চলবেন। উনি নিজে এই পথ দেখিয়েছেন বলেই আমাদের বিজয়ী সম্মিলনীতে তাঁকে ডাকা হয়নি।’’
ঝালদার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে এড়াতে পারছে না দল। জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিজয়া সম্মেলন ঘিরে দু’টি কর্মসূচি হয়েছে বলে জেনেছি। একটি কর্মসূচি ওয়ার্ডের ছিল কিনা, খোঁজ নেব। ওই দু’জনের সঙ্গেই কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy