প্রতীকী ছবি।
রাতের অন্ধকারে দাঁতালের পায়ে ধাক্কা মারল মোটরবাইক। চল্লিশ মিনিট গজরাজের শুঁড়ের নাগালে থেকেও কপাল জোরে বাঁচলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার।
সোমবার রাতে জঙ্গলের মস্ত এক দাঁতালের হানা থেকে বেঁচে ফিরে বাঁকুড়ার বড়কুড়া গ্রামের সিভিক কর্মী উৎপল বাউড়ি সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কাহিনি বলছিলেন গ্রামবাসীদের। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবেও ফিরে আসা যায় তা আমি ভাবতেই পারছি না । চোখ বন্ধ করলেই এখনও দেখতে পাচ্ছি রাস্তার উপর আমি পড়ে আছি। আর আমার বুকের উপরে নেমে আসছে হাতির পিছনের পা । একবার তো আমার বাঁ হাত শুঁড়ে পেঁচিয়েও ফেলেছিল । কিন্তু কী ভাবে যে আমি তার খপ্পর থেকে বেরিয়ে গ্রামে চলে এলাম তা আর মনেও পড়ছে না ঠিকঠাক।’’
২৭ বছরের উৎপল জানান, সোমবার সন্ধ্যে ৭টায় বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থানার বৃন্দাবনপুর মোড়ে ট্রাফিক ডিউটি সেরে নিজের বাইক নিয়ে ফিরছিলেন বড়কুড়া গ্রামের বাড়িতে । মাত্র দু’কিলোমিটারের পথ । গ্রামের কাছাকাছি চলেও এসেছিলেন । কিন্তু গ্রামে ঢোকার মুখে ঘোষপাড়ার ঠিক আগে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে রাস্তার একটি বাঁক ঘুরতেই একেবারে দাঁতালের সামনে!
উৎপলের কথায়, “বাইকের গতি বেশি ছিল না । কিন্তু ইউক্যালিপটাসের জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার ওই জায়গাটা একটু অন্ধকার। বাঁক ঘুরতেই দেখি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি হাতি । তখন আমি হাতিটি থেকে বড়জোর ফুট পনেরো দূরে। ব্রেক কষে দাঁড়াবার চেষ্টা করি । কিন্তু বাইকের সামনের চাকা হাতির বাঁ পায়ে ধাক্কা লাগায় আমি রাস্তার উপর পড়ে যাই । রাস্তায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দেখি হাতিটি তার বাম পা আমার বুকের উপর নামিয়ে আনছে । এরপর কী হয়েছে আমার আর মনে নেই।’’
উৎপলের দাবি প্রায় চল্লিশ মিনিট পর তাঁর জ্ঞান ফেরে। তিনি দেখেন, রাস্তার ধারে একটি নালার মধ্যে তিনি পড়ে আছেন। আর তাঁর বাইকের পিছনে বেঁধে রাখা একটি ব্যাগে থাকা আটা খাচ্ছে দাঁতালটি। তাঁর বক্তব্য, “নালার মধ্যে আমি যেখানটায় পড়েছিলাম তা দাঁতালের শুঁড়ের নাগালে। উঠে ছুট লাগাতেই শুঁড়ে করে আমার বাম হাত ধরে ফেলে। কোনওক্রমে শুঁড় থেকে হাত ছাড়িয়ে ছুটে গ্রামের ঘোষপাড়ায় ঢুকে পড়ি।’’
এরপর বেলিয়াতোড় থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ উৎপলকে প্রথমে বেলিয়াতোড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে পাঠানো হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। যদিও আঘাত গুরুতর না থাকায় সোমবার রাতেই ওই সিভিক কর্মীকে ছেড়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বৃন্দাবনপুর ও পাতাবেশিয়ার জঙ্গলে বছরভর আনাগোনা লেগে থাকে হাতির দলের। তবে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এখন ওই জঙ্গলে একটি দাঁতাল হাতি রয়েছে। বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও কল্যাণ রাই বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। ওই যুবকের শরীরে তেমন আঘাত লাগেনি বলেও জেনেছি । ওই যুবক যে হাতির পাল্লায় পড়েছিলেন অতীতে সেই হাতিটি কোনো মানুষের প্রাণ নিয়েছে বলে রেকর্ড নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy