জেলাবাসীর একমাত্র ভরসা পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ। অথচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহু পরিষেবা এখনও এখানে চালু করা যায়নি। যার ফলে জেলাবাসীকে এখনও পাশের জেলার মেডিক্যাল কলেজের উপরে ভরসা করতে হয়। এমনকি যেতে হয় পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও।
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের সুপার সুকমল বিষই বলেন, ‘‘সবে কয়েক বছর হল এই মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে সমস্ত রকম বিভাগ ও পরিষেবা চালু করা হবে। পরিষেবা দিন দিন অনেক উন্নত হচ্ছে, জটিল অস্ত্রোপচারও হচ্ছে।’’ তিনি জানান, শীঘ্রই ইকোকার্ডিওগ্রাফির মতো বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হবে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে নেই ‘ইউরোলজি’ বিভাগ। যার ফলে কিডনিতে স্টোন বা মূত্রনালিতে স্টোনের মতো সমস্যায় চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের জন্য জেলাবাসীকে যেতে হচ্ছে অন্যত্র। নেই ‘নেফ্রোলজি’, নেই ‘গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’, নেই ‘কার্ডিয়োলজি’, ‘নিউরোলজি’র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’-ও নেই। যার ফলে দুর্ঘটনাগ্রস্থকে পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার করে দেওয়া হচ্ছে।
এমনকি পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে হয় না এন্ডোস্কোপি, কোলনোস্কোপি, ব্রঙ্কস্কোপি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফির পরীক্ষাও। বক্ষ বিভাগ থাকলেও হয় না পালমোনারি ফাংশন টেস্ট।
নতুন ক্যাম্পাসে এখনো পর্যন্ত ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট সম্পূর্ণ ভাবে চালু না হওয়ার জন্য বড় বা ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনগুলি করতে চাইছেন না চিকিৎসেকরা। সেক্ষেত্রে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে দেওয়া হচ্ছে। ইউরোলজির সার্জারি বা প্রটেস্টের অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা এখানে না থাকায় অনেককেই যেতে হচ্ছে বাইরে।
পুরুলিয়া ১ ব্লকের রুদড়া গ্রামের বাসিন্দা সুমন মাহাতোর ফুসফুসে জল জমে গিয়েছিল। তাঁর দাবি, পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক তাঁকে দেখার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে গেলে সেখানকার চিকিৎসক প্রশ্ন তোলেন, এটা পুরুলিয়াতেই করা সম্ভব ছিল।
পুরুলিয়া ১ ব্লকের কানালী গ্রামের বাসিন্দা কাজল পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের বাসিন্দা গুরুপদ মাহাতো দুর্ঘটনায় নাকে আঘাত পান। সে জন্যও তাঁকে রাঁচীতে নিয়ে যেতে হয়। এগুলি জেলায় হয়ে গেলে ভাল হত।’’
আড়শা ব্লকের হেঁটজাড়ি গ্রামের বাসিন্দা তপন মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা প্রায় সবাই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। অথচ সামান্য অসুধবিসুখ হলেই কলকাতায় অথবা ঝাড়খণ্ডের রাঁচীতে পাঠানো হচ্ছে। জেলায় মেডিক্যাল কলেজে যদি এই বিভাগগুলি চালু হয় তাহলে আমাদের আর বাইরে যেতে হবে না।’’
সমস্যার কথা মানছেন চিকিৎসকদের একাংশও। পুরুলিয়া মেডিক্যালের শল্য চিকিৎসক তথা স্বল্পক্ষত বিশেষজ্ঞ পবন মণ্ডল বলেন, ‘‘কার্ডিয়াক ইউনিট, ইউরোসার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নিউরোসার্জারি বিভাগ দ্রুত চালু করা ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি, কোলোনস্কোপি, এন্ডোস্কোপির মতো পরীক্ষাগুলি জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা দরকার। তাহলে মেডিসিন ও শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরা আরও ভাল পরিষেবা দিতে পারবেন।’’
রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার কটাক্ষ, ‘‘নতুন ভবন তৈরি হয়, অথচ রাজ্যে চিকিৎসায় নতুন বিভাগ আর চালু হয় না। কাটমানি ছাড়া এই সরকার আর কিছু বোঝে না। মানুষ মরলেও এদের কিছু যায় আসে না।’’
অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পুরুলিয়া রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ট্রমা কেয়ার ও
ইউরোলজির মতো বেশ কিছু বিভাগ না থাকায় সমস্যা হয় একথা সত্য। ওই সমস্ত বিভাগ যাতে দ্রুত চালু করা যায় সে চেষ্টা চলছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)