প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের কলেজগুলিতে আয়ূষ বিভাগে ভর্তির জট কাটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আয়ূষ মন্ত্রকের ঘোষিত নীতির ফলে রাজ্যের হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি কলেজে ভর্তি নিয়ে জটিলতা ছড়িয়েছিল। তার জেরে বিশেষ করে বেসরকারি কলেজগুলি ছাত্রছাত্রীর অভাবে ধুঁকছিল। রাজ্যে ৪টি সরকারি এবং ৭টি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজ রয়েছে। রয়েছে ১টি করে সরকারি এবং বেসরকারি আয়ুর্বেদিক কলেজ এবং একটি বেসরকারি ইউনানি কলেজ। বেসরকারি কলেজগুলির জন্যে হোমিওপ্যাথি বিভাগে ৩২০, আয়ূষে ৫০ এবং ইউনানি ৪০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেখানে ৯০ শতাংশ আসন এখনও শূন্য রয়েছে।
বিভিন্ন কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা) করা পড়ুয়ারা আয়ূষ পড়তে চাইলে রাজ্যের ‘জয়েন্ট এন্ট্রাস’ পরীক্ষা গিয়ে হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতেন। গত শিক্ষাবর্ষে আয়ূষ মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা জারি করে। অভিযোগ, জটিলতা বাড়ে তার জেরেই।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, নির্দেশিকায় বলা হয়— এ বার থেকে আয়ূষ বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ‘ন্যাশনাল এলিজিবেলিটি এন্ট্রাস’-এ বসতে হবে। সে জন্য অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। কিন্তু নাম নথিভুক্ত করতে গিয়েই ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা পড়তে হয়। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, নির্ধারিত আবেদনপত্রে এমবিবিএস, বিডিএস’ বিভাগে ভর্তির সংস্থান থাকলেও আয়ূষ-এর উল্লেখ নেই। শেষ পর্যন্ত রাজ্য আয়ূষ বিভাগের হস্তক্ষেপে অচলাবস্থা কাটে। কলেজগুলিকে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির অনুমতি দেয় ওই দফতর।
কিন্তু এ বার সেই অনুমতি আর মেলেনি। তাই কলেজগুলিতে কার্যত কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। কলে সূত্রে খবর, নিট নথিভুক্ত এমবিবিএস ও বিডিএস-এ সুযোগ না পাওয়া হাতেগোনা কিছু ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন মাত্র।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতালে আসন রয়েছে ৫০টি। এখনও পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৫ জন। সাঁইথিয়ার বীরভূম বিবেকানন্দ মেডিক্যাল হোমিওপ্যাথিক কলেজের আসন সংখ্যা ৬০টি। ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৫ জন। সাঁইথিয়ার কলেজের অধ্যক্ষ তপন চট্টোপাধ্যায় এবং বর্ধমানের ওই কলেজের অধ্যক্ষ পান্নালাল দে জানান, ভর্তির ক্ষেত্রে জটিলতার জেরে ছাত্রছাত্রীর অভাবে রাজ্যের হোমিওপ্যাথিক কলেজগুলি কার্যত ধুঁকছে।
বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সে সব ক্ষেত্রে শূন্য আসন পূরণে রাজ্য এবং আয়ূষ মন্ত্রককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ভর্তির সময়সীমা ছিল ১৫ অক্টোবর থেকে বাড়িয়ে ২০ ডিসেম্বর করে আদালত। এ রাজ্যেও অচলাবস্থা কাটাতে চার জন পড়ুয়া আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রয়োজনে কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতেই মেধার ভিত্তিতে ভর্তির দায়িত্ব তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
তপনবাবু এবং পান্নালালবাবু জানান, সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ হোমিওপ্যাথি (সিসিএইচ) এবং সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ান মেডিসিন-এর (সিসিআইএম) আইন অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক কলেজগুলিতে ভর্তির নিয়ম রয়েছে। তা পরিবর্তন না করে ওই ধরণের নির্দেশ জারি করা নিয়ম বহিভূর্ত। ছাত্রছাত্রীদের তার মাসুল গুনতে হচ্ছে। এত দিন পরে আর কী কোন পড়ুয়া হোমিওপ্যাথিক কলেজে ভর্তির জন্য বসে থাকবেন?
মামলাকারীদের অন্যতম বর্ধমানের বাবুরবাগের সাহিন আফরোজ বলেন, ‘‘আমার বাবা এক জন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। আমারও হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নিয়মের জটিলতায় ভর্তি হতে পারিনি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আশা করি আদালতের রায়ের পরে এ বার ভর্তি হওয়ার কোনও একটা পথ বের হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy