আবাস প্রকল্পের বাড়ি মেলেনি। ঠান্ডা ঠেকাতে ত্রিপলে ঘর মুড়েছেন বড়জোড়ার বাসিন্দা। —নিজস্ব চিত্র।
‘আর কত বছর পার হলে মাথায় পাকা ছাদ পাব’— মঙ্গলবার শীতের দুপুর শালতোড়ার বারকোনা গ্রামের মানুষের এই প্রশ্নে তপ্ত হয়ে উঠল। একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তৈরি বাড়ির কাজ দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলও। ঘর না পেয়ে শীতে কষ্টে থাকা মানুষগুলো আবাস প্রকল্পে বাড়ি না পেয়ে দুষছেন তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলকেই। তাঁদের দাবি, দু’দলের রেষারেষির বলি হচ্ছেন তাঁরা।
শালতোড়ার বারকোনা গ্রামের বধূ টুম্পা বাউরি দেওয়ালের ভাঙা অংশ চট দিয়ে ঢেকে হাওয়া আটকানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এতে কি আর ঠান্ডা হাওয়া ঢোকা আটকানো যায়? তিন মেয়ে, স্বামীকে নিয়ে খুবই কষ্টে বর্ষা-শীত পার করতে হচ্ছে। আর সরকার বলছে, সবার মাথায় পাকা ছাদ হবে।” কেবল টুম্পা নন, ওই গ্রামের বাসিন্দা অশোক মিত্র, বেঙ্গা বাউরি, তুলসি মাঝি সবার নাম আবাস প্লাস তালিকায় প্রশাসনের ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’-এ রয়েছে। সেই বাড়ি তৈরির ছাড়পত্রও দিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। অথচ টাকা না আসায় বাড়ি হচ্ছে না।
ব্লক তৃণমূল সভাপতি সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “চোখের সামনে এই মানুষগুলোর কষ্ট দেখে কিছুটা ত্রিপল, কিছু কম্বল দেওয়া ছাড়া আমরা আর কী করতে পারি! কেন্দ্রের এত প্রতিনিধি বারবার জেলায় আসেন, এই মানুষগুলির সমস্যা দেখে তাঁরা কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বাড়ি তৈরির জন্য টাকা ছাড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাতে পারেন না?”
শালতোড়ার পাশের ব্লক ছাতনাতে এ বছর বর্ষায় বাড়ি ধসে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধার। ওই বৃদ্ধার নামও আবাস প্লাস তালিকায় ছিল। সময় মতো বাড়ি হলে তাঁকে মরতে হত না বলে আক্ষেপ করেন এলাকাবাসী। ছাতনার কেন্দবনার সুখদেব মাল, ধবনের গনি বাউরিরাও একই ভাবে ভাঙা দেওয়ালে চটের আড়াল দিয়ে শীতের রাত কাটাচ্ছেন। তাঁদের প্রশ্ন, “বাড়ি দেওয়া হবে শুনতে শুনতেই জীবনটা পার হয়ে গেল। বাকি জীবনটাও হয়ত এই ভাঙা ঘরেই কাটবে মনে হয়। শুনছি দেশে অগ্রগতি হচ্ছে। অথচ শীতের হাওয়া আটকাতে এখনও আমাদের পাটের চট আর বৃষায় বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ত্রিপলই ভরসা!’’
স্থানীয় ছাতনা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মহাশ্বেতা মণ্ডল বলেন, “ক্ষমতা অনুযায়ী পঞ্চায়েতের তরফে সাহায্য করি। মানুষগুলোকে ভরসা দেওয়া আর অল্প কিছু সাহায্য করা ছাড়া আমাদের আর কী বা করার আছে? একশো দিনের মজুরির বকেয়া মজুরি পেলেও অনেকে বাড়ির দেওয়ালগুলো মেরামত করে নিতে পারতেন।”
শীতের কামড় থেকে বাঁচতে মাটির বাড়ি ত্রিপলে মুড়ে ফেলেছেন বড়জোড়ার দাঁপাড়ার বাসিন্দা গায়ত্রী কেওড়া। সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “কষ্টের মধ্যেও একটু রেহাইয়ের ব্যবস্থা তো আমাদের নিজেদেরই করে নিতে হবে। সরকার তো ভোট নেয়, আমাদের জন্য কী ভাবে?’’
দিল্লি থেকে রাজভবনে আটকে থাকা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আদায়ের জন্য তৃণমূল ধর্নায় বসলেও গ্রাম-গঞ্জে মানুষের এই প্রশ্নবাণে স্বস্তিতে নেই তৃণমূলও। বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামে গ্রামে গেলেই কবে বাড়ি হবে সেই প্রশ্ন।’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আবাস প্লাস তালিকায় ‘প্রায়োরিটি লিস্টে’ বাঁকুড়া জেলার ৭০ হাজার মানুষের নাম রয়েছে। তাঁদের সবারই বাড়ির ছাড়পত্র জেলা প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রের থেকে টাকা না আসায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।”
বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার সবাইকে মাথায় পাকা ছাদ দিতে চায়। কিন্তু সরকারি প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়ার নামে কাটমানি খাওয়া, প্রকৃত উপভোক্তাদের বাদ দিয়ে ভুয়ো লোকেদের নাম তালিকায় রাখার মতো নানা কেলেঙ্কারি করেছে তৃণমূলের রাজ্য সরকার। কাজেই মানুষের দুর্দশার দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না।’’
সে অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বাঁকুড়া সংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘ভোট না পেয়ে বিজেপি নেতারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় রাজ্যের গরিবদের পাকা ঘর তৈরির প্রকল্প আটকে দিয়েছে। এই পাপের ফল বিজেপিকেপেতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy