ফাইলেরিয়া রোগ নির্মূল করতে রাজ্যের অন্য তিন জেলার সঙ্গে বীরভূমেও বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সে জন্য জেলায় ২৪-২৯ অগস্ট পর্যন্ত বিশেষ ‘গণঔষধ সেবন কর্মসূচি’ পালিত হতে চলেছে।
শুক্রবার সিউড়ি প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স হলে সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানান জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘আমাদের জেলার ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের কিছু বেশি। যাতে তাঁদের রোগ আর বাড়তে না পরে এবং অন্যদের মধ্যে তা সংক্রামিত না হয়, সে জন্য আগেও এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আশা করি, এ বার আরও ভাল ভাবে এই কর্মসূচি পালিত হবে।’’ তিনি জানান, ২০১৬ সালে সাফল্যের হার ৮৫ শতাংশ। যা যথেষ্ট ভাল। উপস্থিতি ছিলেন বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার, এই কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) শকুন্তলা সরকার প্রমুখ। কর্মসূচি সফল করতে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর, জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরের সমস্ত সদস্য, স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য-সহ সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতার জন্য প্রচার শুরু করেছে।
ফাইলেরিয়া রোগ কী? কী ভাবে ছড়ায়?
জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, ফাইলেরিয়া বা গোদ মশাবাহিত একটি রোগ। হাত ফোলা, পা ফোলা, হাইড্রোসিল এই রোগের ফলেই হয়ে থাকে। কিউলেক্স মশা রোগটির জীবাণুর বাহক। তবে ধারক মানুষই। তবে রোগের প্রকাশে মূল ভূমিকা থাকে এক প্রকার কৃমির। পূর্ণবয়স্ক কৃমি আক্রান্ত ব্যক্তির লসিকাগ্রন্থির মধ্যে বাস করে। স্ত্রী কৃমি বিপুল সংখ্যায় প্রজনন ঘটায়। অনু কৃমি বা মাইক্রো ফাইলেরিয়া রক্তের মধ্যে চলে আসে। তখনই রোগের প্রকাশ ঘটে। আক্রান্ত মানুষকে মশা কামড়ালে অনু কৃমি বা মাইক্রো ফাইলেরিয়া মশার শরীরে চলে আসে। পরে যখন ওই মশা অন্যকে কামড়ায়, তাঁর শরীরেও প্রবেশ করে মাইক্রো ফাইলেরিয়া। নিয়ম করে ওষুধ খেলে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাস করা পূর্ণবয়স্ক কৃমিগুলি অনেক ক্ষেত্রেই মারা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মারা না গেলেও দুর্বল হয়ে যায়। তখন কৃমি প্রজননের ক্ষমতা হারায়। ফলে সেই ব্যক্তির রোগ আর বাড়তে পারে না এবং তিনি গোদ হওয়া থেকে নিস্তার পান।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সারা দেশে ফাইলেরিয়া দূরীকরণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ২০০৪ সালে এই বিশেষ কর্মসূচি নেয়। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ফাইলেরিয়া দূরীকরণের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্যই রাজ্য সরকার ও রাষ্ট্রীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগিতায় ফাইলেরিয়া প্রতিষেধক খাওয়ানো হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফাইলেরিয়া প্রতিষেধক খাওয়ানোর টানা ছ’দিনের এই কর্মসূচি বীরভূমের জেলার পাশাপাশি বাঁকুড়া, পুরুলিয়াও মুর্শিদাবাদেও রয়েছে।
শকুন্তলাদেবী জানান, রাতের দিকে ফাইলেরিয়া রোগের জীবাণু সক্রিয় থাকে। তাই জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে জেলায় সংক্রমণের হার ১.১৯ শতাংশ।
ফাইলেরিয়ার ওষুধ কি সবাই খেতে পারে? দুই স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ জানাচ্ছেন, ‘এমডিএ’ কর্মসূচির মাধ্যমে সকলে একই দিনে ওষুধ খেলে তবেই ওই এলাকা ফাইলেরিয়া রোগ ছড়ানো থেকে মুক্ত হবে। তবে দু’বছরের কমবয়সি শিশু, গর্ভবতী মহিলা, গুরুতর অসুস্থ কেউ ও অত্যন্ত বৃদ্ধ শয্যাশায়ী ব্যক্তিরা এই কর্মসূচি থেকে বাদ থাকবেন। সামান্য অসুস্থতায় অবশ্য ওষুধ খাওয়ানোয় সমস্যা নেই। তবে, খালি পেটে এই ওষুধ খাওয়া যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy