বোলপুর হাসপাতালে স্বরূপ গড়াই। শুক্রবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন আগে লাভপুরের মীরবাঁধ গ্রামে এক বিজেপি কর্মীকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমুলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার লাভপুরে এক জনসভায় ওই খুন নিয়ে সরব হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর ফিরে যাওয়ার পরের দিনই নানুরের রামকৃষ্ণপুরে গুলিবিদ্ধ হলেন এক বিজেপি কর্মী। লাঠির আঘাতে জখম তাঁর বাবাও। শুক্রবার রাতের ওই ঘটনাতেও আঙুল উঠেছে শাসকদলের দিকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপির পতাকা টাঙানো ঘিরে শুক্রবার রাতে দু’দলের ঝামেলার সূত্রপাত। গুলিবিদ্ধ যুবকের নাম স্বরূপ গড়াই। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের বাবা ভুবনেশ্বর গড়াইকেও বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতেই দু’জনকে ভর্তি করা হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় স্বরূপকে। তাঁর বুকে গুলি লেগেছে। ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকায়। আক্রান্তের পরিবারের অভিযোগ, লাভপুরে দিলীপবাবুর সভায় যোগ দেওয়ায় তৃণমূল ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য তা মানেননি। শনিবার সন্ধ্যায় স্বরূপদের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করে। পুলিশও ওই অশান্তির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে। মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন বোলপুর আদালতে তোলা হলে চার জনের পুলিশি হেফাজত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের শ্যামসুন্দর মন্দিরে রাধাঅষ্টমী উপলক্ষে মহোৎসব ছিল। সেখান থেকে খাওয়াদাওয়া করে সপরিবার বাড়ি ফিরছিলেন স্বরূপেরা। তখন গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীরা পতাকা টাঙাচ্ছিলেন। অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। তা নিয়ে দু’পক্ষের বচসা বাধে। ঝামেলার মধ্যে গিয়ে পড়েন স্বরূপেরা। শনিবার বোলপুর হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভুবনেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলের ছেলেদের বলি কেন ঝামেলা করছ? পতাকা তো তোমরাও টাঙাও। সে কথা শুনেই ওরা বাঁশ-লাঠি নিয়ে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’’ স্বরূপের অভিযোগ, ‘‘বাবাকে বাঁচাতে গেলে ওরা আমার উপরেও চড়াও হয়। আমি বিজেপি করি বলে তৃণমূলের এমনিতেই রাগ ছিল। আমাকে গুলি করে দেয়।’’
চোখের সামনে বাবার উপরে হামলায় নানুরের বাড়িতে সন্ত্রস্ত ছেলেমেয়ে। নিজস্ব চিত্র
স্বরূপের জ্যেঠতুতো দাদা অনুপ গড়াইয়ের অভিযোগ, ‘‘আমরা দুই ভাই লাভপুরে দিলীপ ঘোষের সভায় গিয়েছিলাম। সেই আক্রোশে তৃণমূলের লোকেরা আমাদের দেখে নেবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। শুক্রবার রাতে আমিও ওদের সঙ্গে ছিলাম। পুলিশের সামনেই তৃণমূলের লোকজন কাকাকে মারে। ভাইকে গুলি করে।’’ পুলিশ এই অভিযোগ মানেনি। অনুপের আরও দাবি, দুষ্কৃতীরা তাড়া করে তাঁদের গ্রামছাড়া করে দেয়। স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে স্বরূপের ছেলেমেয়েদেরও একটি গোপন জায়গায় রেখে তাঁরা গা ঢাকা দেন। ‘‘সেই সুযোগে আমার এবং ভাইয়ের বাড়িতে ওরা ভাঙচুর চালায়।’’—অভিযোগ অনুপের।
বিজেপির নানুর মণ্ডল কমিটির সভাপতি বিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের সংগঠন বৃদ্ধির কাজ করছেন স্বরূপ। সেই আক্রোশেই তাঁর এবং তাঁর বাবার উপরে হামলা।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপির লোকেরাই প্রথমে আমাদের কর্মীদের উপরে চড়াও হয়। আমাদের লোকেরা বাধ্য হয়ে ওদের আক্রমণ প্রতিহত করে। তবে কে, কাকে গুলি করেছে বলতে পারব না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সামান্য জমির পাশাপাশি রামকৃষ্ণপুর মোড়ে স্বরূপের একটি সাইকেল মেরামতের দোকান রয়েছে। তাঁর মা রেণুকাদেবী বর্ধমানের কোতলঘোষ গ্রামে মেয়ের বাড়িতে রয়েছেন। স্ত্রী চায়নাদেবী স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছে তিন নাবালক ছেলেমেয়ে। তাদের চোখের সামনেই গুলিবিদ্ধ হন বাবা। সকাল থেকে তারা কেঁদে চলেছে। আর বারবার পড়শিদের জিজ্ঞাসা করছে— ‘‘বাবা
কেমন আছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy