কোতুলপুরে হরকালী প্রতিহারকে সংবর্ধনা তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।
দলীয় বিধায়ক শিবির বদলে গিয়েছেন ঘাসফুলে। তাতে হা-হুতাশের বদলে মিষ্টি বিলি করলেন বিজেপি নেতারা। আবার সেই দলবদলু বিধায়ককে স্বাগত জানাতে সংবর্ধনাসভা করল তৃণমূল। কোতুলপুরের বিধায়ক তথা বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি হরকালী প্রতিহারকে ঘিরে এ ভাবেই শুক্রবার দিনভর সরগরম থাকল জেলা রাজনীতি।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন হরকালী। তারপরেই বিজেপি নেতারা হরকালীকে সুবিধাবাদী বলে কটাক্ষ শুরু করেন।তৃণমূলের অবশ্য দাবি ছিল, উন্নয়নের স্বার্থেই তিনি দল বদলেছেন। এ দিন কোতুলপুরে ঘটা করে হরকালীকে সংবর্ধনা দেয় তৃণমূল।
লোকসভা ভোটের মুখে বিধায়কের দলবদলের অস্বস্তি ঢাকতে বিজেপি কী করে, সেদিকে নজর ছিল অনেকের। হরকালী ‘বিদায়ে’র খুশিতে এ দিন সকালে সোনামুখীতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি পথচলতি মানুষকে মিষ্টি মুখ করান।দলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখা সকালেই কোতুলপুরে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের মিষ্টিমুখ করান। বিভিন্ন জায়গায় বাজিও পোড়ানো হয় বলে অমরনাথের দাবি। তিনি বলেন, “ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে চলা নেতাদের বিজেপিতে ঠাঁই নেই। এমন লোকজনের চলে যাওয়াটা দলের স্বাস্থ্যের পক্ষে মঙ্গলের।’’
তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “বিধায়ক খুইয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়েই এ সব করছে বিজেপি।” এ দিনের সংবর্ধনাসভা থেকেই হরকালী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি গদ্দার না সম্পদ সেটা ঠিক সময়েই বুঝতে পারবেন। বিজেপিতে থেকে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ওই দলে আর নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই। তাই উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃণমূলে এসেছি।’’
দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্য মন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। হরকালীর অভিযোগ, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়কে ফাঁসানো হয়েছে।’’ বিজেপি সভাপতি অমরনাথের কটাক্ষ, ‘‘শিবির বদলের সঙ্গে সঙ্গে সুর তো বদলাতেই হবে।’’
হরকালীর দলবদলকে প্রকাশ্যে বিজেপি যতই গুরুত্বহীন দেখানোর চেষ্টা করুক দলের অন্দরে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। বিজেপির এক নেতার ক্ষোভ, “রাজ্যের নেতারা সংগঠন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন, জনসংযোগে নানা নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু বিধায়কদের ধরে রাখতে পারছেন না কেন, এটা ভাবার সময় এসেছে।’’ হরকালী দল বদলাতে চেয়ে একাধিকবার তৃণমূলের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন বলে খবর রটেছিল। তাঁকে রুখতে দলের রাজ্য নেতৃত্ব আদৌ সচেষ্ট হয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওই নেতা।
দলীয় সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কাছে জেলার তরফে নালিশও জানানো হয়েছে। যদিও এ কথার সত্যতা সরাসরি মানতে চাননি বিজেপি নেতারা।
গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার দু’টি আসনেই বড় ব্যবধানে জেতে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার ১২টি আসনের মধ্যে আটটি তারা জেতে। হরকালী সদ্য দল বদলালেও বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ ভোটের ফলাফলের পরপরেই তৃণমূলে চলে গিয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের পরে পুরনির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। হরকালীর ঘটনায় নতুন করে লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দলের একশ্রেণির কর্মীদের ক্ষোভ নানা ভাবে প্রকাশ্যে আসছে। দলের অন্দরে চলতে থাকা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমনিতেই চিন্তায় রেখেছে নেতৃত্বকে, তার উপরে বিধায়কের দলবদলে নতুন করে অস্বস্তি দানা বেধেছে বলে আড়ালে মানছেন গেরুয়া শিবিরের অনেকেই।
জেলা সভাপতি অমরনাথের অবশ্য দাবি, “বিজেপি জেলায় সাংগঠনিক ভাবে এখন আগের তুলনায় অনেক মজবুত। আগামী লোকসভা নির্বাচনেই তার প্রমাণ মিলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy