Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কেন ১৪৪, প্রশ্ন বিজেপির

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হোক তা চায়নি প্রশাসন। এই জল্পনা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতেও পারছে না জেলা পুলিশের একাংশ। 

অশান্ত: সিউড়িতে বিজেপির ধর্না তুলে দিল পুলিশ।ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

অশান্ত: সিউড়িতে বিজেপির ধর্না তুলে দিল পুলিশ।ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৬
Share: Save:

ধর্না চলছিল সেই সোমবার থেকে। সেই মঞ্চ থেকে লাগাতার পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দাগছিলেন বিজেপি নেতারা। এত দিন পুলিশ তা তোলার ব্যাপারে তৎপর হয়নি। ১৪৪ ধারা জারি হবে, এমন কোনও আভাসও ছিল না।

অথচ শনিবার সেটাই হল! দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সিউড়িতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বাইরে শুরু করা ধর্না কর্মসূচি ভন্ডুল করে দিল জেলা পুলিশ। শনিবারই কেন এমন পুলিশি তৎপরতা হল প্রশাসন। সেই প্রশ্নই তুলল বিজেপি। যে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ধর্না তুলতে ১৪৪ ধারা জারি, সেই শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের সংক্ষিত উত্তর, ‘‘প্রয়োজন ছিল।’’ কিন্তু, প্রয়োজনটা ঠিক কী, সেটা নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, এর পিছনে প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের উপস্থিতি এড়ানোই অন্যতম কারণ। তা ছাড়া, এ দিনই ধর্না মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবারের লোকজনের। এই অবস্থায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হোক তা চায়নি প্রশাসন। এই জল্পনা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতেও পারছে না জেলা পুলিশের একাংশ।

ভারতী এ দিন বলেছেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলতার কোন ধরনের অবনতির জন্য ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, তার জবাব আমাদের চাই।’’ দরকারে হাইকোর্টে মামলা করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বিজেপি-র আর এক রাজ্য নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের যে দুষ্কৃতীরা আমাদের কর্মীকে খুন করেছে, তাদের ধরতে পারছে না বীর পুলিশ! এখন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পণ্ড করতে এসেছে। এর পিছনে তৃণমূলেরই কলকাঠি রয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, যা হয়েছে আইন মেনেই হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেছেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি করা এবং তা ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়াটা পুরোপুরি পুলিশ-প্রশাসনের এক্তিয়ারে। আমাদের এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ ৬ সেপ্টেম্বর রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন নানুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা, বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াই। রবিবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে তিনি মারার যান। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে সোমবার থেকে সিউড়িতে এসপি অফিসের সামনে ধর্নামঞ্চ তৈরি করে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। প্রতিদিন জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন নেতা এসে পুলিশ ও তৃণমূলের মুণ্ডপাত করেছেন। জেলা পুলিশ সুপারের গাড়ি ঘিরে ‘হায় হায়’ ধ্বনি উঠেছে। শুক্রবার পুলিশ সুপারকে কোমরে দড়ি পরিয়ে ঘোরানোর হুমকি পর্যন্ত দেন দলের যুব মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি ধ্রুব সাহা। পুলিশ অবশ্য এত দিন এই ধর্নাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ধর্না তোলারও চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু, ভারতী আসার দিনই আচমকা ধর্না তুলে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

অন্য দিকে, খুনে অভিযুক্তদের কয়েক জন তাঁদের ‘অনুসরণ’ করছে, এই ভয়ে এ দিন নানুরের বাড়ি থেকে বেরিয়েও ধর্না মঞ্চে পৌঁছতে পারেননি স্বরূপ গড়াইয়ের বাবা ভুবনেশ্বর গড়াই, স্ত্রী চায়না ও দাদা অনুপ গড়াইরা। শন্তিনিকেতন থানা অবশ্য নিরাপদে তাঁদের বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছে। অনুপ বলেন, ‘‘আমরা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, তখন থেকেই আমাদের গাড়ির পিছু নেওয়া হয়েছিল। সেই ভয়েই আমরা শান্তিনিকেতন থানায় চলে যাই।’’

সিউড়িতে ধর্না তোলা নিয়ে গোলমালের জেরে বিজেপি-র ৪২ জনকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল-সহ কিছু জনকে নিয়ে যাওয়া হয় সদাইপুর থানায়। বাকিদের রাখা হয় সিউড়ি থানায়। ভারতী ঘোষ সোজা চলে যান যান সদাইপুরে। সেখানে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হন তিনি। মুখ বেঁধে থানায় কারা, সে অভিযোগও তোলেন। রাতে অবশ্য আটক বিজেপি নেতা-কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Siuri 144
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy