Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Amit Shah

Bibhishan Hansda: কথা রাখেনি বিজেপি, ফুঁসে উঠলেন শাহকে ভোট-ভোজ খাওয়ানো বাঁকুড়ার বিভীষণ

ভোজের পর শাহ কথা দিয়েছিলেন জটিল রোগে আক্রান্ত বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসা করাবেন দিল্লির এমস হাসপাতালে। সেই প্রতিশ্রুতির এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে।

হাঁসদা পরিবার এবং তাঁদের বাড়িতে অমিত শাহ।

হাঁসদা পরিবার এবং তাঁদের বাড়িতে অমিত শাহ। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৩৯
Share: Save:

বাঁকুড়ার অখ্যাত গ্রাম চতুর্ডিহি শিরোনামে এসেছিল গত বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই। সেই সময়ে শিরোনামে এসেছিলেন ওই অখ্যাত গ্রামের এক অখ্যাত বাসিন্দা জনমজুর বিভীষণ হাঁসদা। বাংলায় নীলবাড়ির লড়াইয়ের ‘ওয়ার্ম আপ’ পর্বে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সদলে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন তাঁর বাড়িতে। ভোজের পর শাহ কথা দিয়েছিলেন জটিল রোগে আক্রান্ত বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসা করাবেন দিল্লির এমস হাসপাতালে। সেই প্রতিশ্রুতির এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। শুরুতে বিজেপি-র তরফে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য মিললেও মেয়েকে দিল্লির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। তাতেই হতাশ বিভীষণ।

২০২০ সালের ৫ নভেম্বর সেজে উঠেছিল বিভীষণের বাড়ি। সে দিন বাংলায় সফরে থাকা অমিত ছাড়াও বিভীষণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ আরও অনেকেই। বিভীষণের বাড়ির দেওয়ালে বিজেপি-র নির্বাচনী প্রতীক পদ্মফুলের পাশে ‘অমিতজি স্বাগতম’ লেখা এখনও জ্বলজ্বল করছে। অমিতকে কাছে পেয়ে খাওয়ার ফাঁকেই অসুস্থ মেয়ে রচনার কথা বলেছিলেন বিভীষণ। চিকিৎসার খরচ চালানো নিয়ে নিজের অসহায়তার কথাও জানিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, ছেলেবেলা থেকে ডায়াবেটিসে ভোগা মেয়ের দিল্লির এমসে চিকিৎসা হবে। কিন্তু এক বছর পার হলেও কথা রাখা হয়নি বলে বিভীষণের অভিযোগ।

এ নিয়ে বিভীষণ বলেন, ‘‘সবাই বলেছিল, আমার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ভার নেবে। দিল্লির এমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। প্রথম প্রথম ওষুধ, ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থাও করেছিল। কিন্তু এখন কেউ খোঁজটুকুও নেয় না। কেউ কথা রাখেনি। আমরা স্বামী-স্ত্রী অন্যের জমিতে দিনমজুরি করি। যা উপার্জন করি তা দিয়েই মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়।’’

বিভীষণ হাঁসদা, তাঁর স্ত্রী মণিকা হাঁসদা এবং মেয়ে রচনা হাঁসদা।

বিভীষণ হাঁসদা, তাঁর স্ত্রী মণিকা হাঁসদা এবং মেয়ে রচনা হাঁসদা। নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসার জন্য অমিত দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শাহ চলে যাওয়ার পর বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা এখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার-সহ অন্য বিজেপি নেতারা গিয়েছিলেন বিভীষণের মেয়ের খোঁজ নিতে। রচনার চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সুগারের পরিমাণ জানতে রক্ত পরীক্ষা এবং ওষুধের ব্যবস্থাও করেন তিনি এবং পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। সেই আশ্বাসে বিভীষণ এবং তাঁর স্ত্রী মণিকা ভেবেছিলেন, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে তাঁর মেয়ে। কিন্তু তার পরে মাসের পার হয়েছে। রচনার দিল্লি যাওয়া হয়নি। রচনাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে না দেখে মন ভাঙে হাঁসদা দম্পতির। মেয়ের চিকিৎসার স্বপ্নে চিড় ধরতেই ফুঁসে উঠলেন ‘অসহায়’ বাবা। চিকিৎসার খরচের ব্যাপারে বিভীষণ বলেছেন, ‘‘আমার মেয়েকে রোজ চার বার ইনসুলিন দিতে হয়। সঙ্গে কয়েকটি ওষুধও খেতে হয়। সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি টাকা খরচ। প্রথমে অনেকে সাহায্য করেছিলেন। এখন আর কেউ খোঁজটুকু রাখেন না।’’ অসহয়তার কথা ফুটে উঠেছে বিভীষণের স্ত্রী মণিকার গলাতেও। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের নিয়ে সবাই রাজনীতি করে গেল। কিন্তু কেউ কথা রাখল না। আমি আর আমার স্বামী অন্যের জমিতে জনমজুরি করে সামান্য উপার্জন করি। তা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার এই বিপুল খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।’’

যদিও চতুর্ডিহির হাঁসদা পরিবারের অভিযোগ মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ বলেন, ‘‘বিভীষণের মেয়ের চিকিৎসা এবং ওষুধ কিনে দেওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করা আছে। নিয়মিত ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগেই চিকিৎসার খরচ বাবদ তাঁর ব্যাঙ্ক আকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও এমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে কিছু বলেননি সুভাষ। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাও নাকি বিভীষণকে কথা দিয়েছিলেন কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার। বিভীষণের ক্ষোভের কথা শুনে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। কোনও রকম অসুবিধা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা আছে ওই পরিবারকে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah bankura Delhi AIIMS BJP Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy