Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Petrol

Petrol & Diesel: বিজেপি শাসিত রাজ্যে সস্তা পেট্রল-ডিজেল, কোন পথে বাংলা, কী ভাবছে নবান্ন-তৃণমূল

জ্বালানিতে কর কমানোর সময় কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, ৫৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি সত্ত্বেও এটা দেশবাসীকে দীপাবলির উপহার।

কেন্দ্র কর কমানোয় রাজ্যের আয়ও কমেছে।

কেন্দ্র কর কমানোয় রাজ্যের আয়ও কমেছে। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ১৪:৩৮
Share: Save:

জ্বালানির জ্বালা থেকে মুক্তি দিতে সদ্য বড় পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণকে ঢাল করে রাজনৈতিক লড়াই টানতে না পেরে শেষমেষ দুই প্রধান জ্বালানি তেলের (পেট্রল ও ডিজেল) উৎপাদন শুল্কে ছাড় দিয়েছে বিজেপি সরকার। তার পরেই বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যও সেই পথে হেঁটেছে। রাজ্য সরকারের ভাগের করের হারও কমিয়েছে। যে সূত্রে জল্পনা শুরু হয়েছে, বাংলায় কি তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার?

২০২০ সালের মে মাস থেকে লাগামছাড়া পেট্রল ও ডিজেলের দাম। গত ১৭ মাসে দুই জ্বালানির লিটার প্রতি দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৩৮ টাকা ৮৫ পয়সা এবং ২৯ টাকা ৩৫ পয়সা। যা কমার কোনও লক্ষণও দেখা যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রতি লিটার পেট্রলে ৫ টাকা এবং ডিজেলে ১০ টাকা উৎপাদন শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তার পরে বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের ‘ইতিবাচক’ পদক্ষেপ নিয়ে বাংলার বিজেপি নেতারা সরব হয়েছেন।

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল অবশ্য পুরো বিষয়টিকেই ‘সস্তা রাজনৈতিক চমক’ বলে বর্ণনা করেছে। যা থেকে জল্পনা শুরু হয়েছে, এ রাজ্যে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে ‘ভ্যাট’ (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) কমানোর পথে হাঁটতে চাইছে না সরকার। এ নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু নবান্ন সূত্রের খবর, বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতেই শুল্ক কমানোর পক্ষপাতী নয় রাজ্য।

জ্বালানিতে কর কমানোর জন্য যে সময় বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, তাতে আসন্ন ভোটের ছায়া দেখছে বিরোধীরা। আগামী বছরের গোড়াতেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, বাংলার ভোটে ভরাডুবির পর ‘রাজনৈতিক চাপ’ সামলাতেই এই সিদ্ধান্ত বিজেপি তথা মোদী সরকারের। করোনা পরিস্থিতির পর কেন্দ্রের জিএসটি বাবদ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানিতে উৎপাদন শুল্ক কমানো তুলনায় সহজ হয়েছে। অন্য দিকে, জ্বালানির দাম আকাশ ছোঁয়ায় দেশের সার্বিক আর্থিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছিল। বাড়ছিল মুদ্রাস্ফীতি। এমনিতেই লাগাতার কৃষক বিক্ষোভে জেরবার কেন্দ্র। সামনেই রবিশস্যের মরসুম। সেই সময়ে ডিজেলের দাম নতুন চাপও তৈরি করতে পারে। এমনই নানা আর্থিক ও রাজনৈতিক চাপ থেকেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত। এই পরিস্থিতিতে দলের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে বিজেপি শাসিত গুজরাত থেকে ত্রিপুরা— সব সরকারই রাজ্যের কর কমিয়েছে।

তবে তৃণমূল তথা নবান্ন মনে করছে, বিভিন্ন কারণে সারা দেশেই বিজেপি-র যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, তাতে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে করের হার কমানোর সিদ্ধান্ত থেকেও তেমন কোনও রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না বিজেপি। বাংলাতে তো নয়ই। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, এখনই বাংলায় এমন কোনও নির্বাচনও নেই, যাতে এর কোনও ভাল বা মন্দ প্রভাব পড়বে। সুতরাং রাজ্য সরকারের রাজস্ব আয়ের উপায়ের উপর অকারণে প্রভাব ফেলার দরকার নেই।

সরকারের তরফে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউই কিছু বলতে চাইছেন না। একান্ত আলোচনায় যদিও অনেকে মেনে নিচ্ছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার একটি ‘গুগলি’ দিয়েছে। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, অর্থ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছে, রাজ্য সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় উৎস পেট্রল-ডিজেলের মূল্য থেকে প্রাপ্ত অর্থ। যদিও কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের আয় অনেকটাই কম। অর্থ দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এখন সরকারি হিসেবে পেট্রল-ডিজেলের মূল দামের সঙ্গে পরিবহণ খরচ এবং কেন্দ্রীয় শুল্ক যোগ করলে মূল্য দাঁড়ায় ৮০ টাকার মতো। আর এর উপরে ভ্যাট বাবদ রাজ্যের আয় প্রতি লিটারে যথাক্রমে ১৯-২০ টাকা এবং ১৩-১৪ টাকা।’’

প্রসঙ্গত, দুই জ্বালানির মূল দামের সঙ্গে পরিবহণ খরচ এবং কেন্দ্রীয় শুল্ক যোগ করে যে অঙ্ক হয়, তার উপর ভ্যাট বসানো হয়। এর হার বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রকম। বাংলায় ভ্যাটের হার পেট্রলে ২৫ শতাংশ এবং ডিজেলে ১৭ শতাংশ। এখন কেন্দ্র তাদের শুল্ক কমানোয় রাজ্যের আয় এমনিতেই কিছুটা কমবে। এর উপরে আবার নতুন করে আর রাজস্ব ক্ষতি না বাড়ানোরই পক্ষে নবান্ন।

ওই কর্তা আরও জানান, জ্বালানি বিক্রি থেকে সব সময়েই কেন্দ্র যে কোনও রাজ্যের থেকে বেশি আয় করে। কারণ, শুধু কর নয়, কেন্দ্র নানা ‘সেস’ বাবদেও আয় করে। তার ভাগ রাজ্য পায় না। পুরোটাই যায় কেন্দ্রের কোষাগারে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যেটা করছে সেটা ঠিক নয়। কারণ, এর ফলে বাকি রাজ্যও কিছুটা হলেও চাপে পড়ছে। তবে কেন্দ্র চাইলে আরও কিছুটা দাম কমাতে পারে। রাজ্যের উপরে দায় চাপানোটা ঠিক নয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy