পাশে: রামজীবন মাহাতোর সঙ্গে সদস্যেরা। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হলেন কংগ্রেসের রামজীবন মাহাতো। তাঁকে সমর্থন করলেন বিজেপির ১৩ জন সদস্য। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে দুই দলের সম্পর্ক যাই হোক, বরাবাজারে কিন্তু তাঁদের হাতে হাত মেলাতে দেখে অনেকেই তাজ্জব। যদিও দু’দলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, স্থানীয় স্তরে নানারকম পরিস্থিতিতে এই রকম কিছু সমঝোতা করতে হয়।
কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম বন্দোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘বরাবাজারে লিখিত জোট হয়নি। স্থানীয় স্তরে বোঝাপড়া হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রামজীবনবাবু কংগ্রেস না ছাড়লেও তিনি আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।’’
শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে জটিলতায় গত ১০ মাস ধরে থমকে ছিল এই পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার বুধবার সভাপতি হিসেবে রামজীবনবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া দিল প্রশাসন। বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য তাঁর গলায় মালা পরিয়ে দেন। বিডিও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছিল। সম্প্রতি ওই ওই মামলার রায় রামজীবনবাবুর পক্ষে যাওয়ায় মহকুমাশাসকের নির্দেশে এ দিন তাঁকে সভাপতির চেয়ারে বসানোর আনুসঙ্গিক আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, পরবর্তীতে বাকি পদগুলি পূরণ করা হবে।
এর আগে রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি একক ভাবে বিজেপি দখল করে। বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ ভাবে বিজেপি বোর্ড গড়েছে। জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতে, বরাবাজারের সভাপতি রামজীবনবাবু হলেও বিজেপির সমর্থন নিয়েই তাঁকে সব কাজ করতে হবে। কাজেই সে দিক থেকে এই পঞ্চায়েত সমিতিও বিজেপির বলা চলে। এরই সঙ্গে জেলার সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন সম্পূর্ণ হল।
তবে রামজীবনবাবুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির চেয়ারে বসা নিয়ে অবশ্য কম নাটক হয়নি। বিজেপি ও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, এখানে তাদের দুই দল পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন সমঝোতা করেছিল। ২৮ আসনের এই পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল ১৪টি আসন পায়। কংগ্রেসের এক মাত্র জেতেন বর্ষীয়ান রামজীবনবাবু। তাঁকে সামনে রেখে বিজেপির ১৩ সদস্যও বোর্ড গঠনের দাবি জানান।
সেপ্টেম্বরে বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনের সভা ডাকা হয়। দু’পক্ষের তরফে সমান সদস্য থাকায় লটারির মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বিজেপি সদস্যেরা সভাপতি পদে রামজীবনবাবুর নাম প্রস্তাব করেন। লটারি হয়। বিজেপি দাবি করেছিল, রামজীবনবাবুর নাম লটারিতে ওঠে। তাঁকে শংসাপত্র দিয়েও প্রশাসন পরে ওই বোর্ড গঠনের সভা বাতিল করে। যদিও প্রশাসনের দাবি ছিল, গোলমাল হওয়ায় জেলা প্রশাসন ওই সভা স্থগিত করে। এর বিরুদ্ধে রামজীবনবাবু আদালতের দ্বারস্থ হন। সম্প্রতি ওই মামলার রায় বার হয়।
এ দিন সকালে বরাবাজারে বিজেপির পার্টি অফিস থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিয়ে মিছিল পৌঁছয় ব্লক অফিসে। তাঁদের ঘিরে বিজেপি কর্মীদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। রামজীবনবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘১০ মাস মাস সময় সভাপতি না থাকায় সমিতির উন্নয়নমূলক কাজ থমকে গেল। এ জন্য তৃণমূল দায়ী।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি দাবি করেন, ‘‘আদালতের রায় আমরা মেনে নিচ্ছি। তবে রামজীবনবাবুরাই প্রথম আইনি পথে হেঁটেছিলেন। সে কারণেই সময় নষ্ট হয়েছে।’’ বিজেপির ওবিসি মোর্চার জেলা সভাপতি সুভাষ মাহাতোর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের কথাতেই প্রশাসন গত সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের বোর্ড গঠনে বাধা দেয়। আদালতের রায়ে সত্যের জয় হয়েছে।’’ নতুন সভাপতি বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করব। কাটমানি কেউ নিতে পারবেন না। কোনও রকম অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিকে, বরাবাজারের সভাপতির চেম্বার থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন প্রাক্তন সহ-সভাপতি তৃণমূলের প্রতুল মাহাতো। বিজেপির ওবিসি সেলের জেলা সভাপতি সুভাষ মাহাতোর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy