গ্রামের পথে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিনের বিরতি ছিল। রিপোর্ট নেগেটিভ আসতেই ফের কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কারও করোনার উপসর্গ আছে কি না, খোঁজ নিতে বাড়ি-বাড়ি বেরিয়ে পড়েছেন বান্দোয়ানের পচাপানি গ্রামের আশাকর্মী বছর পঁয়তাল্লিশের সুহিতা মুর্মু। শরীরে আগের মতো জোর ফিরে না পেলেও সাইকেলে গ্রামে গ্রামে ঘোরায় ছেদ পড়েনি তাঁর।
বান্দোয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সামান্য জ্বর ও গায়ে ব্যথার উপসর্গ থাকায় এলাকার একটি শিবিরে ৮ সেপ্টেম্বর করোনা পরীক্ষা করান সুহিতাদেবী। ১২ সেপ্টেম্বর তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সুহিতাদেবী বলেন, ‘‘১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকার সময়ে গোড়ার দিকে খুব খারাপ লাগছিল। পরে রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে স্বস্তি পাই। কিন্তু গায়ে একেবারে জোর ছিল না। অনেকে ছুটি নিয়ে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু ছুটিতে থাকি কী করে? পচাপানি ছাড়াও, পাশের শালিডি ও বাঙ্গরি গ্রামের লোকজনের রিপোর্ট সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য দফতরে জানানো আমার কাজ। আগে এলাকার কয়েকজন সংক্রমিত হয়েছিলেন। ফলে, বাড়িতে বসে থাকার ঝুঁকি নিতে পারিনি।’’ বান্দোয়ান ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ কাজিরাম মুর্মু বলেন, ‘‘সুহিতাদেবী ফের কাজে ফিরেছেন দেখে ভাল লাগছে।’’
২০০৮ সাল থেকে আশাকর্মীর কাজ করছেন সুহিতাদেবী। বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি, দুই ছেলে ও স্বামী রয়েছেন। তাঁর স্বামী পেশায় কৃষক চিত্ত মুর্মু বলেন, ‘‘সংসার সামলানোর সঙ্গে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে আশাকর্মীর কাজ— দু’টোই আগে একা দেখত সুহিতা। একে-একে করোনা রোগী ধরা পড়ায়, চাপ বাড়লেও সুহিতার রুটিনে বদল ঘটেনি। এতটুকু বিশ্রাম পেত না। কিন্তু করোনা থেকে ওঠার পরে এখন আর ওকে আমরা বাড়ির কাজ করতে দিই না। আমরাই সবাই হাতে-হাতে রান্না করে নিই।’’
চিত্তবাবু জানান, এখনও সকালে বা দুপুরে সাইকেল নিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে লোকজনের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিতে বেরোন সুহিতাদেবী। সঙ্গে তাঁরা খাবার ও জলের বোতল দিয়ে দেন। সুহিতাদেবীর বড়ছেলে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, ‘‘মায়ের শরীর দুর্বল। তাই বেরনোর সময়ে মাকে বার বার পথেই খাবার খেয়ে নিতে মনে করিয়ে দিই। না হলে লোকজনের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে খাবার কথাই হয়তো ভুলে যাবেন।’’
পচাপানি গ্রামের বাসিন্দা সুরজমণি টুডু, বিমলি টুডু, রামু হেমব্রম বলেন, ‘‘সুহিতাদিই আমাদের অসুখ-বিসুখের খবর রাখেন। তিনিই কঠিন রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সবাই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সুহিতাদি কাজে বেরোনোয় আমরাও শান্তি পেয়েছি।’’ বিডিও (বান্দোয়ান) শুভঙ্কর দাস বলেন, ‘‘সুহিতাদেবী করোনা জয় করে ফিরেছেন। তাঁকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy