Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ডাক দিচ্ছে পর্যটন

‘অচেনা বীরভূম’ খুঁজছে প্রশাসন

শান্তিনিকেতন, তারাপীঠ, বক্রেশ্বর বা পাথরচাপুড়ি শুধু নয়, বীরভূম মানে ছড়িয়ে থাকা পূরাকীর্তি। বীরভূম মানে মন্দির-মসজিদ। স্থাপত্য-ভাস্কর্য, ইতহাস প্রসিদ্ধ জায়গা, প্রাকৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ স্থান, নানা সুরের সম্মিলন। পর্যটন, শিল্পের অচেনা-অদেখা এক মিলন মেলা।

রাজনগরের তাঁতিপাড়ায় চলছে তসর শিল্পীদের কর্মকাণ্ডের ডকুমেন্টশনের কাজ। —নিজস্ব চিত্র

রাজনগরের তাঁতিপাড়ায় চলছে তসর শিল্পীদের কর্মকাণ্ডের ডকুমেন্টশনের কাজ। —নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫০
Share: Save:

শান্তিনিকেতন, তারাপীঠ, বক্রেশ্বর বা পাথরচাপুড়ি শুধু নয়, বীরভূম মানে ছড়িয়ে থাকা পূরাকীর্তি। বীরভূম মানে মন্দির-মসজিদ। স্থাপত্য-ভাস্কর্য, ইতহাস প্রসিদ্ধ জায়গা, প্রাকৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ স্থান, নানা সুরের সম্মিলন। পর্যটন, শিল্পের অচেনা-অদেখা এক মিলন মেলা। স্থির ও চলমান ছবি, শব্দ, লেখা এবং লাইভ অনুষ্ঠানের মিলিত রূপ ইন্টার ডিসিপ্লিনারি আর্ট ফর্মের মাধ্যমে এ বার সেই অচেনা, অদেখা বীরভূমের নানা দিক তুলে জেলা চেনানোর সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। পুরো বিষয়টিকে তাঁরা সামনে আনবেন আগামী ২৭ তারিখ আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবসে।

জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, প্রতিষ্ঠিত স্পটগুলির বাইরে জেলার আরও স্পটগুলি— যেগুলি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে, সেই স্পটগুলি ও শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরতেই এমন ভাবনা। সকলের সাহায্যেই এটা করতে চাই।

যাঁদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এ কাজ করছেন, সেই দলের সদস্যরা গত দশদিন ধরে জেলা চষে ফেলেছেন। বিভিন্ন স্পটের কোথায় কেন যাবেন পর্যটকেরা তার তথ্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সুবিধা অসুবিধা, হস্ত শিল্পী, লোকশিল্পী, যা আগত পর্যটকদের দেখানো প্রয়োজন তার সমস্ত খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরতেই এমন ছুটে বেড়ানো। বলছেন, দলের সদস্য জেলার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এবং জেলাস্কুলের শিক্ষক সারথি দাস, বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক পার্থশঙ্খ মজুমদার এবং আমোদপুর জয়দুর্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক মলয় মণ্ডলেরা। শুধু ওঁরাই নন দলে রয়ছে কলাভবন থেকে পাশ করা শিল্পী, সিনেমাটোগ্রাফির ছাত্র, ফোটোগ্রাফার, বাংলা ও ইংরাজী সাহিত্যের কৃতী তরুণ প্রজন্ম।

শনিবার বিকালে ওই সদস্যদলটির দেখা মিলল রাজনগরের তাঁতি পাড়ায়। তসর শিল্পের জন্য বিখ্যাত গ্রাম তাঁতিপাড়ায় কী দেখবেন পর্যটকেরা?

যে উত্তর মিলল সারথিবাবুদের কাছ থেকে, তাতেই স্পষ্ট ঠিক কোন দিকটা তুলে ধরতে চাইছে জেলা প্রশাসন। ওঁদের যুক্তি বক্রেশ্বর থেকে পাথর চাপুড়ি যাওয়ার পথেই পড়ছে তাঁতিপাড়া। তসরের কাপড় তৈরির জন্য রাজ্যে বিখ্যাত জায়গাটি, কাঁথা স্টিচের আঁতুর ঘরও বলা চলে। বর্তমানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হ্যাণ্ড পেইন্টিং করছেন তসর শিল্পীরা। এতটা পথ এসে কেউ যদি একবার তাঁতিপাড়া ঘুরে যান, তাঁরা তসর শিল্পীদের কাছ থেকেই সরাসরি এবং তুলনায় কম দামে শাড়ি, সালোয়ার, বা অন্যান্য জিনিস কিনে নিয়ে যেতে পারেন।

কেউ বক্রেশ্বর আসেন তিনি কেন শান্ত নীল জলাধার নীল নির্জনে যাবেন না— যিনি দুবরাজপুরের মামা ভাগ্নে পাহাড় দেখতে এলেন আরও কিছুটা দূরের হেতমপুর রাজবাড়ি, সেরিনা বাঁধ কিংবা খয়রাশোলের কীর্তনের জন্য প্রসিদ্ধ গ্রাম ময়নাডাল, পুরানো বক্রেশ্বর দেখে লোকপুর থেকে ঘর সাজানোর সেরপাই কিনে ফিরবেন না! যিনি তারাপীঠ এসেছেন তিনি কেন নলাটেশ্বরী বা আকালিপুর ভদ্রপুরে যাবেন না? বা ঘন শাল পিয়ালের জঙ্গল গণপুরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে যাবে না। এসবের হদিস মিলবে ওই উপস্থাপনায়।

সাংস্কৃতির দিক থেকেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ জেলা বীরভূম।

শুধু বাউল নয়, লোটো, ভাদু গান, রায়বেশ নৃত্য, লাভপুরের বিষয়পুরে বহুরূপী— অনেক কিছুই দেখতে পারেন পর্যটকরা। আর বীরভূমের প্রাকৃতিক শোভা তো রয়েইছে। সেই টানেই বার বার ছুটে এসেছেন আসছেন বরেণ্য চিত্র পরিচালকেরা।

কিন্তু কীভাবে উপস্থাপিত করা হবে জেলার এত বৈচিত্র?

দলের সদস্যরা জানাচ্ছেন, একটি বাসের মধ্যে ৫২টি ডিসপ্লে বোর্ডে তুলে ধরা হবে সব কিছু। সেখানে থাকবে ছবি, লেখা। বাসের মধ্যে চারটি এলইডি টিভি, যেখানে চলবে বিভিন্ন স্পট সংক্রান্ত ভিডিও ক্লিপ। থাকবে সহায়ক। এবং লাইভ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। কোথায় কী ভাবে যাবেন কেন যাবেন তাঁর সব তথ্য মিলবে ওখানেই। চলমানতার প্রতীক হিসাবে বাসের কথা ভাবা হয়েছে।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘২৭ তারিখ বাসটি সিউড়ি থেকে ছেড়ে বোলপুর-শান্তিনিকেতন ও পরে তারপীঠে যাবে। ওই দিনই জেলার হোমগুলি তিনটি পৃথক বাসে তিনটে স্পট দেখানোর ব্যবস্থা থাকছে। ২৮ তারিখ সিউড়ি ভকত সিংহ পার্কে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।’’

অন্য বিষয়গুলি:

world tourism day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy