ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া, দু’জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল যেমন ভেসেছে, তেমনই জলবন্দি হয়েছে শহরও। সময়ের সঙ্গে শহরগুলি বহরে বাড়লেও নিকাশি-সমস্যার দিকে নজর না দেওয়ায় এই পরিণতি বলে অভিযোগ। খামতি কোথায়, খোঁজ নিল আনন্দবাজার
পরিকল্পনাহীন নগরায়নই কি বাঁকুড়া শহরের বন্যার মূলে? সম্প্রতি রেকর্ড বৃষ্টিতে শহর ডুবে যাওয়ার পরে, এই আলোচনাই ঘুরে ফিরে আসছে বাসিন্দাদের মুখে। এ জন্য পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনার অভিযোগ তুলছেন অনেকে। সরব বিরোধীরাও। অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাঁকুড়ার পুর-কর্তাদের একাংশও। যদিও পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন বাঁকুড়ার পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অলকা সেন মজুমদার।
মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুশান্তকুমার ভক্ত বলেন, “বাঁকুড়া শহরের নিকাশি সমস্যা আমাদের নজরে রয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে শহরের সর্বত্র মাটির তলায় নালা গড়ার প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তা বাস্তবায়িত হলে, সমস্যা অনেকটাই মিটবে। আপাতত যে নালাগুলি রয়েছে, সেগুলির সংস্কারের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।”
বাঁকুড়া শহর ছুঁয়ে যাওয়া গন্ধেশ্বরী নদীর জায়গায় অবৈধ নির্মাণ, শহরের বিভিন্ন পুকুর-ডোবা বুজিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এক দিকে, শহরের একাংশে এখনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই। অন্য দিকে, যে সব এলাকা দিয়ে জল বেরিয়ে যেত, সেখানে হু হু করে বেড়েছে বসতি। ফলে, তুমুল বৃষ্টি হলেই জল-বন্দি হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা সমীর দুলের অভিযোগ, “চোখের সামনে দেখছি, বিভিন্ন পাড়ায় বহু ছোট পুকুর, ডোবা ভরাট হয়ে গিয়ে ইমারত গড়ে উঠছে। জমা জল আর বেরোবে কোথায়?’’ বাঁকুড়া শহরের ৪, ৭, ১১, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশে নতুন পল্লি তৈরি হয়েছে। অথচ, কোথাও সে ভাবে নিকাশি নালা, রাস্তাঘাট গড়া হয়নি বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এলাকায় রাস্তা ও নালা তৈরির দাবি তুলে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জুনবেদিয়া বাইপাস লাগোয়া গাঁধীনগর কলোনির কিছু বাসিন্দা।
ওই এলাকার বাসিন্দা সুমিলা দত্ত বলেন, “পুরসভার অনুমতি নিয়েই বাড়ি তৈরি করেছি। অথচ, এলাকায় রাস্তা রা নিকাশি নালা কিছুই তৈরি করেনি পুরসভা। অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু জল জমে যায়। খুব সমস্যায় পড়ি।” শহরের প্রবীণ বাসিন্দা জগন্নাথ দে বলেন, “নতুন নতুন পল্লি গড়ে উঠছে। কিন্তু সুষ্ঠু কোনও নিকাশি-পরিকল্পনা নেই।’’
কেন এই সমস্যা হচ্ছে?
বাঁকুড়া পুরসভার আধিকারিকদের একাংশের কথায়, কিছু ক্ষেত্রে পুরসভার কাছে আগাম অনুমতি না নিয়েই লোকজন বাড়ি বানিয়ে নিচ্ছেন। পরে, জরিমানা দিয়ে অনুমতি আদায় করে নিচ্ছেন। এর ফলে, বাড়ছে সমস্যা। সে কথা মেনে নিচ্ছেন বাঁকুড়া পুরসভার প্রাক্তন উপপুরপ্রধান দিলীপ আগরওয়ালও। দিলীপবাবু বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই আগাম অনুমতি না নিয়ে ইচ্ছে মতো বাড়ি বানিয়ে ফেলছেন লোকজন। আবার কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনামতো বাড়ি বানানো হচ্ছে না। যেখানে জল পার হওয়ার জন্য জায়গা ছাড়া হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বাস্তবে সেখানেই বাড়ি বানানো হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানার দাবি, “নগরায়নের সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। এ নিয়ে পুরসভা কোনও পদক্ষেপও করছে না। এ সমস্যা মেটানোর কোনও উদ্যোগই দেখছি না।” যদিও সে অভিযোগ মানতে নারাজ পুরকর্তৃপক্ষ।
বাঁকুড়া পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অলকা সেন মজুমদার বলেন, “শহরের উন্নয়নের কাজে কোনও খামতি নেই। এ বার রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে বলেই শহরে এত সমস্যা হয়েছে। তবে আগামী দিনে বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা পাশ করার আগে, আরও ভাল ভাবে সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে। অপরিকল্পিত নির্মাণ রুখতে পুরসভা তৎপর রয়েছে।’’ (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy