বাঁকুড়ায় দলীয় সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। নিজস্ব চিত্র।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট করে জেলার বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে, ওই দুই বিধায়কই তৃণমূল শিবিরে চলে যান। সামনে আরও একটি বিধানসভা ভোট। তার আগে মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় এসে ওই দুই বিধায়কের দলবদলের জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
এ দিন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা নীতির বিরুদ্ধে বাঁকুড়া শহরে মিছিল করে জনসভা করে কংগ্রেস। ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন অধীর।
গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে বাম-কংগ্রেস জোটের ভরাডুবি হলেও বাঁকুড়ায় জোটের ফলাফল নজর কেড়েছিল। জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে জয়লাভ করেন জোট প্রার্থীরা। যার মধ্যে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়ে জয়লাভ করে বিধায়ক হন যথাক্রমে শম্পা দরিপা ও তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। ভোটের ফল বেরনোর কয়েকমাসের মধ্যেই কংগ্রেসের ওই দুই বিধায়ক তৃণমূল শিবিরে যোগ দেন। কংগ্রেসের তরফে তাঁদের বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার দাবি তোলা হলেও, তাঁরা তা করেননি। বিধানসভায় সরকারি ভাবে এখনও দু’জনেই কংগ্রেসের বিধায়ক হলেও জেলায় তৃণমূলের কর্মসূচিতে সামনের সারিতে দেখা যায় তাঁদের।
অধীর এ দিন অভিযোগ করেন, “বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের বিধায়কেরা টিকিট নেওয়ার আগে আমাকে লিখিত ভাবে দরখাস্ত করে জানিয়েছিলেন, তাঁদের টাকার দরকার নেই। অথচ, ভোটে জিতে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) লজ্জা হওয়া উচিত তিনি কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বিধায়কদের নিজের দলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”
তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনাদের সমর্থনের পরেও আমরা বিধায়কদের ধরে রাখতে পারিনি। এ জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’
তবে শম্পাদেবী ও তুষারকান্তিবাবু দাবি করেন, “অর্থের বিনিময়ে নয়, উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে গিয়েছি।” শম্পাদেবী বলেন, “যাঁরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, তাঁরা পাঁচ বছর পরে আমার কাছে কাজের হিসেব চাইবেন। কংগ্রেসের যা নীতি, তাতে করে উন্নয়ন করা সম্ভব হত না। তবে আমাকে টিকিট দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের কাছে আমি কৃতজ্ঞ”।
অধীর তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘এই তৃণমূলও থাকবে না। একই ভাবে ওদেরও ঘর ভাঙছে। দিদি প্রতিদিন যত প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছেন, ততই তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যাঁরা তৃণমূলে থাকতে পারছেন না, অথচ, নীতিগত কারণে বিজেপিতেও যেতে পারছেন না, তাঁরা কংগ্রেসে আসতে পারেন। বছরখানেক পরে তৃণমূল দলটার কোনও অস্তিত্বই থাকে কি না সেটাই দেখার।”
জবাবে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা দাবি করেন, “কংগ্রেস দলটার অস্তিত্ব এখন ক্যালেন্ডারের পাতায়। আমাদের দল থেকে কেবল দুর্নীতিগ্রস্তেরাই বেরিয়ে অন্য দলে যাচ্ছেন। লোকে কাজ করতে আমাদের দলে আসেন। কাউকে টাকা দিয়ে কিনতে হয় না।” তবে অধীরের দাবি, “দেশে আজ পর্যন্ত যতটুকু ভাল কাজ হয়েছে, তা কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারই করেছে। আগামী দিনেও বাংলার ভবিষ্যৎ হল কংগ্রেস।”
কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে অধীর দাবি করেন, “দিল্লিতে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ৫৫ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে
উদ্যোগী হচ্ছে না।’’
এ নিয়ে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের পাল্টা দাবি, “যে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, কংগ্রেস তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করুক। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের মধ্যে কত জন কৃষক রয়েছেন সেটা নিয়েই প্রশ্ন আছে। কেন্দ্রীয় সরকার তবুও তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy