খড়্গপুর আইআইটি’র ৫৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মনমোহন সিংহ (বাঁ দিকে)। ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহন পালের সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র ।
খড়্গপুর ও মেদিনীপুর: খড়্গপুর আইআইটিতে ‘সায়েন্স পার্ক’ গড়তে আগ্রহী ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যেখানে শিল্পসংস্থাগুলি তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ইউনিট গড়তে পারবে। আইআইটি-র শিক্ষক ও ছাত্রদের সহযোগিতায় ইউনিটগুলি চলবে। ২০১১ সালে খড়্গপুর আইআইটি-র সমাবর্তনে নিজের বক্তৃতায় দেশের অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্প তথা দেশের চাহিদাকে এ ভাবেই মেলাতে চেয়েছিলেন মনমোহন।
সেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আইআইটি। মৃদুভাষী হলেও তিনি ছিলেন সুবক্তা। অর্থনীতিতে তাঁর পাণ্ডিত্য অনস্বীকার্য। ২০১১-র ২২ অগস্ট খড়্গপুর আইআইটি-তে এসেছিলেন মনমোহন। সে দিন মঞ্চে তাঁর হাতে প্রকাশিত হয়েছিল আইআইটি-র হীরকজয়ন্তী বর্ষের পুস্তিকা ‘সিক্সটি ইয়ার্স আইআইটি খড়্গপুর ইন দ্য সার্ভিস অব দ্য নেশন’। বক্তৃতা করতে উঠে আইআইটি-র শিলান্যাস যিনি করেছিলেন, সেই প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর স্মৃতিচারণ করেছিলেন মনমোহন। ১৯৫৬ সালে আইআইটি-র প্রথম সমাবর্তনে জওহরলাল যে বক্তৃতা করেছিলেন, সে প্রসঙ্গও তুলেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন আইআইটি খড়্গপুরের জন্য সে বার কেন্দ্রীয় বাজেটে ২০০ কোটি টাকা
বরাদ্দের কথা।
আইআইটি খড়্গপুরের ডেপুটি ডিরেক্টর থাকার সুবাদে সে দিন মনমোহনকে কাছ থেকে দেখেছিলেন প্রাক্তন অধ্যাপক অমলকুমার মজুমদার। অমল বললেন, ‘‘কলাইকুণ্ডা থেকে হেলিকপ্টার যখন আইআইটি-র মাঠে নামল, তখন আমি সেখানে ছিলাম। পরে আমরা গিয়েছিলাম প্রশাসনিক ভবনে, ডিরেক্টরের সভাগৃহে। সেখানে কিছুক্ষণ বৈঠক হয় মনমোহনের সঙ্গে। তার পরে সমাবর্তন মঞ্চে। কাছ থেকে একজন নরম বক্তাকে দেখেছিলাম। প্রতিটি কথায় তাঁর পাণ্ডিত্য ঝরে পড়ছিল। বক্তৃতাপত্রের বাইরে বেরিয়ে তিনি নিজের মতো
বক্তৃতা করেছিলেন।’’
মনমোহনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বর্ষীয়ান বিধায়ক ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহন পাল, স্বপন দুবে, অমল দাস প্রমুখ। জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অমল দাস বলছেন, ‘‘আমি তখন দলের খড়্গপুর শহর সভাপতি ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। চাচা ও জেলা সভাপতি সঙ্গে ছিলেন। মনমোহনের মতো মৃদুভাষী, বিনয়ী, পণ্ডিত মানুষকে দেখার মুহূর্ত আজ খুব মনে পড়ছে। আমি প্রণাম করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি করমর্দন করেছিলেন।’’ স্বপন তখন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি। তিনিও বলছেন, ‘‘কখনওই মনে হয়নি উনি একজন কূটনীতিক, একজন প্রধানমন্ত্রী। ওঁর পাণ্ডিত্য যে অগাধ, কথাবার্তায় বুঝেছিলাম।’’
সে দিন বক্তৃতায় মনমোহন স্পষ্ট করেছিলেন, এ দেশে কৃষি প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে আইআইটি খড়্গপুরের। প্রতিষ্ঠানের তরফে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
ওই দশককে ‘উদ্ভাবনের দশক’ উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের কাজের ধরন বদলাতে হবে। সমস্যা সমাধানে অন্য ভাবে ভাবতে হবে এবং সব সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উচ্চতর শিখরে পৌঁছনোর চেষ্টা করতে হবে।”
আর সেই লক্ষ্যপূরণে আইআইটির পরিকাঠামো ঢেলে সাজার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর বার্তা ছিল, ‘‘উৎকর্ষ, নমনীয়তা এবং সর্বোচ্চ মানের পরিকাঠামোই মূল মন্ত্র হওয়া প্রয়োজন। তা হলেই সেরা মানের গবেষক ও শিক্ষকদের আকৃষ্ট করতে পারবে আইআইটিগুলি।”
সেই স্মৃতিই ফিরে ফিরে
আসছে আইআইটিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy