Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Jhalda

কাজের ফাঁকে ছেলেকে পড়াচ্ছেন একাকী মা

ঝালদা শহরের উপকণ্ঠে খাটজুড়ির পেট্রল পাম্পে রোজ সকাল, বিকেল এ ভাবেই কাজের ফাঁকে ছেলেকে পড়া দেখিয়ে দেন পূর্ণিমা রায়।

পেট্রল পাম্পে ছেলেকে পড়াচ্ছেন পূর্ণিমা।

পেট্রল পাম্পে ছেলেকে পড়াচ্ছেন পূর্ণিমা। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
ঝালদা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৬
Share: Save:

ধুলো উড়িয়ে পাশের পাকা রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে কত গাড়ি। পাশের পেট্রল পাম্পের চাতালে গেঞ্জি আর ছেঁড়া প্যান্ট পরে বসে এক খুদে মাথা দুলিয়ে সুর করে তুলে পড়ে যাচ্ছে, ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর...’। আটকে গেলেই পাম্পে গাড়িতে তেল দিতে দিতে কবিতার লাইন ধরিয়ে
দিচ্ছেন মা।

ঝালদা শহরের উপকণ্ঠে খাটজুড়ির পেট্রল পাম্পে রোজ সকাল, বিকেল এ ভাবেই কাজের ফাঁকে ছেলেকে পড়া দেখিয়ে দেন পূর্ণিমা রায়। দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে সৌরভকে বড় করতেই স্বামী-বিচ্ছিন্না পূর্ণিমা এই পেশা বেছে নিয়েছেন। তাই ছেলের পড়ায় ফাঁক রাখতে চান না তিনি।

স্থানীয়েরা এ দৃশ্য রোজ দেখলেও সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে এই ছবি-কাহিনি ভাইরাল হওয়ায় পূর্ণিমার লড়াই নেটিজেনদের কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছে। তাঁকে উৎসাহ দিয়ে অনেকে মন্তব্য করছেন। ঝালদার প্রাক্তন বিডিও পূর্ণদেব মালাকার লিখেছেন, ‘‘এ ছবি দেখলে চোখে জল এসে যায়।’’

পাশের উহুপীড়ি গ্রামের রেলকর্মী দোলগোবিন্দ মাহাতোর কথায়, ‘‘এক দিন বাইকে তেল ভরতে গিয়ে ছেলেকে মানুষ করতে একা মায়ের এই লড়াই দেখে মনটা ভরে গেল। ভদ্রমহিলা প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে বুঝিয়ে তাঁর অনুমতি নিয়ে ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করি।’’

বছর ত্রিশের পূর্ণিমার কথায়, ‘‘দাঁড়িয়ে থেকে আট ঘণ্টা খাটনির পরে ঘরে ঢুকলে রান্নাবান্নার কাজে মন দিতে হয়। তাই তেল দেওয়ার ফাঁকেই ছেলেকে যতটা পারি পড়া বুঝিয়ে দিই।’’

স্থানীয়েরা জানান, তাঁর জীবন বড় কষ্টের। এক সময় সংসার পেতেছিলেন। কিন্তু সে ‘সুখ’ বেশি দিন সয়নি। অতীত ঘাঁটতে না চেয়ে পূর্ণিমা বলেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে প্রথমে বাপের বাড়িতে উঠেছিলাম। কিন্তু বাবাও খেটে খান। তাই পরে ঠিক করি, নিজের পায়ে দাঁড়াব। ছেলেকে মানুষ করে তোলাই এখন প্রধান কাজ।’’

বেশ কয়েক বছর ধরে পেট্রল পাম্পে কাজ করছেন। আগে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। পরে পাম্পেই একচিলতে ঘরে অল্প ভাড়ায় উঠে এসেছেন। আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘ছেলেকে ভাল পোশাক, খাবার দিতে পারি না। কিন্তু ওকে অনেক দূর পড়াতে চাই। নিজে বেশি দূর না পড়লেও যতখানি সম্ভব পড়া দেখিয়ে দেব। উঁচু ক্লাসে উঠলে কী হবে
জানি না।’’

এলাকার বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান চন্দন মাহাতো বলেন, ‘‘একদিন পাম্পে গিয়ে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে এসেছি। সবাই সাধ্যমতো তাঁর পাশে দাঁড়ালে একাকী মায়ের লড়াই অনেক সহজ হয়ে যাবে।’’

পূর্ণিমা স্বপ্ন দেখেন, ছেলের হাত ধরেই একদিন অমাবস্যা কেটে গিয়ে তাঁর জীবনে পড়বে পূর্ণিমার চাঁদের আলো।

অন্য বিষয়গুলি:

woman Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy