Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Proud of a Girl Child

গাড়ি সাজিয়ে শিশুকন্যাকে বাড়িতে আনলেন মনোজ

মনোজের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় গৃহশিক্ষক বিএসসি পাশ মনোজের সঙ্গে বছর চারেক আগে বিয়ে হয় নানুরের সুপর্ণা সামন্তের।

গাড়ি সাজিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে এলেন মনোজ ঘোষ।

গাড়ি সাজিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে এলেন মনোজ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
   কীর্ণাহার  শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৯
Share: Save:

লাভপুরের পরে কীর্ণাহার। নাসিরুল ইসলামের পরে মনোজ ঘোষ।

মাস কয়েক আগে গাড়ি সাজিয়ে হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাত মেয়েকে বরণ করে বাড়ি এনেছিলেন লাভপুরের নাসিরুল। প্রায় একই ভাবে গাড়ি সাজিয়ে নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাত মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন কীর্ণাহার ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মনোজ ঘোষ। প্রদীপ দেখিয়ে প্রতিবেশীদের মিষ্টিমুখ করিয়ে বরণ করে নেওয়া হল সদ্যোজাতকে। তার নাম রাখা হয়েছে আদিত্রী।

মনোজের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় গৃহশিক্ষক বিএসসি পাশ মনোজের সঙ্গে বছর চারেক আগে বিয়ে হয় নানুরের সুপর্ণা সামন্তের। রবিবার বোলপুরের সিয়ানের একটি নার্সিংহোমে তাঁদের প্রথম সন্তান হয়। বুধবার গাড়ি সাজিয়ে স্ত্রী এবং সদ্যোজাত মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন মনোজ। মনোজের মা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা স্বপ্না নাতনিকে বরণ করে ঘরে তুলেছেন।

মনোজ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা গঙ্গাপ্রসাদও গৃহশিক্ষকতা করেন। প্রতিবেশী সুচরিতা ঘোষ, অর্পিতা ঘোষ, দিলীপ শর্মা, জ্যোতিব্রত রায়, মিলন দত্তেরা বলেন, ‘‘সমাজ অনেক এগিয়ে গেলেও আজও বহু পরিবারে কন্যাসন্তান নিয়ে অনীহা আছে। কিন্তু মনোজের পরিবার যে ভাবে কন্যাসন্তানকে সাদরে বরণ করে নিলেন তা এক কথায় নজির সৃষ্টি করেছে।’’

নার্সিংহোম থেকে তাঁদের নিয়ে আসেন স্থানীয় জুবুটিয়ার গাড়িচালক শুকদেব কৈর্বত্য। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে আমি অনেক প্রসূতি এবং সদ্যোজাতকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু কন্যাসন্তানকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস আগে দেখিনি।’’ মনোজের বাবা-মা বলেন, সন্তান ঈশ্বরের দান। তাকে ঘরের লক্ষ্মীরূপে সাদরে বরণ করে নিয়েছি।’’ খুশির হাওয়া মনোজের শ্বশুরবাড়িতেও। শ্বশুর বিপদতারণ সামন্ত এবং শাশুড়ি সুলেখা সামন্ত বলেন, ‘‘জামাই এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের উদার মানসিকতার কথা আমাদের জানা ছিল। তাই ছেলে-মেয়ে যাই হোক না কেন, তা নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা ছিল না। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রসব হয়েছে এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা।’’

কী বলছেন সুপর্ণা? তিনি বলেন, ‘‘আদিত্রী আমাদের ভালবাসার সন্তান। ওর মুখ দেখে প্রসবযন্ত্রণা ভুলে গিয়েছি।’’ এক সঙ্গে বিএড-এর প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়ে মনোজের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। মনোজ বলেন, ‘‘আমি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে লিঙ্গবৈষম্য, কন্যাভ্রুণ হত্যা-সহ নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযানের কাজ করি। তাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ছেলে আর মেয়েতে কোনও তফাত নেই। প্লেন থেকে রাষ্ট্রচালনা— মেয়েরা সমান পারদর্শী। সেই বার্তাটাই সমাজকে দিতে চাই।’’

খুশি নাসিরুলও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘটনা আনন্দ বয়ে আনে।’’ লাভপুর সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজকর্মী আয়েসা খাতুনেরা বলেন, ‘‘ওই যুবক এবং তাঁর পরিবার সমাজকে একটা বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তা যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছবে ততই মঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

kirnahar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy