দুর্ঘটনার পরে চলছে উদ্ধারের কাজ। বিষ্ণুপুরে শনিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
দ্রুত গতিতে ছুটে আসা মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে গেল যাত্রিবাহী বাসের মাঝখান। উল্টে গেল বাস। আহত হলেন বাসের চালক, কন্ডাক্টর-সহ ৪৪ জন যাত্রী। শনিবার সকালে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর বাইপাসে কাটানধার এলাকায়, বিষ্ণুপুর-আরামবাগ ২ নম্বর রাজ্য সড়কে। বাঁকুড়া পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় জখম ২৬ জন পুরুষ এবং ১৮ জন মহিলা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে আছেন তাঁরা।’’
শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরের দিক থেকে বিষ্ণুপুর শহরে ঢোকার মুখে কাটানধার এলাকায় বাসটি ডান দিকে উল্টে পড়ে আছে। ত্রিপল ঢাকা চাল বোঝাই ট্রাকের সামনের অংশ ভেঙে ঢুকে গিয়েছে বাসের পেটের মধ্যে। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে যাত্রীদের জিনিসপত্র, বাসের ভাঙা অংশ।
ঘটনাস্থলের কাছেই বিষ্ণুপুর শহরে ঢোকার পথে একটি তোরণ নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে কর্মরত চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা সোমনাথ মিশ্র, গণেশ বাগদি বলেন, ‘‘আমরা কাজ করছিলাম তোরণে। চোখের সামনে দেখলাম বাসটা শহরে ঢোকার জন্য ডান দিকে আস্তে আস্তে বাঁক নেওয়ার জন্য ‘ইন্ডিকেটর’ ও হর্ন দিয়ে ধীর গতিতে বাঁক নিচ্ছিল। সেই সময়ে জয়পুরের দিক থেকে দ্রুত গতিতে মাল বোঝাই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে বাসের মাখখানে ধাক্কা মারে। বিকট শব্দের সঙ্গেই লাল ধুলোয় চারপাশ ভরে যায়। কাজ ফেলে ছুটে গিয়ে দেখি বাসটা উল্টে দিয়েছে। যাত্রীরা ভয়ে আর্তনাদ করছেন। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারে নেমে পড়ি।’’
বাসটি আসছিল পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহি থানার উচালন থেকে। জয়কৃষ্ণুপুর হয়ে বিষ্ণুপুরে যাওয়ার কথা ছিল। আর উল্টোদিক থেকে ট্রাকটি কোতুলপুল হয়ে বিষ্ণুপুরের দিকে আসছিল। বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আহত হয়ে শুয়ে রয়েছেন বর্ধমানের বাসিন্দা বাস চালক মিঠুন দাস ও কন্ডাক্টর নবকুমার রায়। বাস চালক বলেন, ‘‘উচালন থেকে সকাল সাড়ে ছ’টায় বেরিয়েছিলাম। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য বাইপাসে নিয়ম মেনে ধীর গতিতেই বাঁক নিচ্ছিলাম। তখন ১০টা ২০ হবে। সেই সময় কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’ কন্ডাক্টর নবকুমার বলেন, ‘‘আমি দরজা থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম ট্রাকটা ধেয়ে আসছে। চিৎকার করলাম। তারপর আর হুঁশ ছিল না। ট্রাকের চালক ব্রেকে পা দিলে এই দুর্ঘটনা হতো না।’’
সময়টা সকালের দিকে হওয়ায় ওই বাসে বিষ্ণুপুরের আশপাশের পাতলাপুর, হিংজুড়ি, বেলিয়াড়া, জয়কৃষ্ণপুর থেকে বহু ছাত্রছাত্রী চেপে ছিলেন। এই বাসে ছিল উলিয়াড়া গ্রামের দুই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মিতা বারিক ও প্রকৃতি মুখোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক মানস মণ্ডল আহতদের দেখতে ছুটে যান হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে ছাত্রী দু’জনের বাড়িতে সময়ের মধ্যেই পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ আহত যাত্রীদের দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ও।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে ছুটে আসা বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই রাস্তায় পথ নিরাপত্তার বালাই নেই বললেই চলে। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য সিভিক ভলান্টিয়াররা থাকলেও তাঁরা অনেকেই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ গাছতলায় চেয়ার নিয়ে বসে মোবাইল দেখেন। আর রোদ চড়লেই পাশের লাইন হোটেলের ভিতরে ঢুকে পড়েন। তাহলে আর রাস্তায় গাড়ির উপরে নজর রাখবেন কী ভাবে?
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সেন, দুর্গা ঘোষ বলেন, ‘‘এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। কিন্তু শহরে ঢোকার প্রবেশ পথে এত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা কেন হবে?’’ বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই এলাকা যান নিয়ন্ত্রণে নজরদারিতে খামতি নেই। দুর্ঘটনায় জন্য অনেকে সমালোচনা করছেন। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের জন্য ওই এলাকায় একটা ছাউনি তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।’’ তাঁর আশ্বাস, দুর্ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় আরও কড়া নজরদারি শুরু হচ্ছে। ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক ও খালাসি পালিয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মহকুমাশাসকের আশ্বাস, ‘‘অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই যানবাহনের উপরেও নজরদারি শুরু হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy