Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Injury

দেওয়াল চাপা পড়ে আহত মেয়ে-জামাই

মুক্তর খড়ের চালার মাটির বাড়ি ধসে তাঁর মেয়ে-জামাই সহ চার আত্মীয় আহত হয়েছেন। সে সময় মুক্ত বাড়িতে ছিলেন না। আহতদের উদ্ধার করে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভেঙে পড়া সেই বাড়ি। শনিবার।

ভেঙে পড়া সেই বাড়ি। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৪ ০৯:০৪
Share: Save:

বর্ষা সবে রাজ্যে ঢুকেছে। তার মধ্যেই এক রাতের বৃষ্টিতে কাঁচাবাড়ি ধসে জখম হলেন চার জন। শুক্রবার বিকেলে বড়জোড়ার পখন্নার এই ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ধর্মরাজের গাজন উপলক্ষে পখন্নার কল্যাণপুরের বাসিন্দা মুক্ত বাগদির বাড়িতে মেয়ে-জামাই সহ কয়েকজন আত্মীয় এসেছেন। মুক্তর খড়ের চালার মাটির বাড়ি ধসে তাঁর মেয়ে-জামাই সহ চার আত্মীয় আহত হয়েছেন। সে সময় মুক্ত বাড়িতে ছিলেন না। আহতদের উদ্ধার করে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্তর জামাই অর্জুন বাগদির চোট বেশি থাকায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

এই ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে জেলায়। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে বিষ্ণুপুর থানার বাঁকাদহের বড়ামারা গ্রামে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। তার পরেই ছাতনা থানার ঘোষেরগ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হাঁসাপাহাড়িতে দেওয়াল চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজনৈতিক মহল। ২০২২ সালের শেষ দিকে কেন্দ্রের আবাস প্লাস প্রকল্পের সমীক্ষা হয় জেলায়। বাঁকুড়া জেলায় ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৫৮টি পরিবার পাকা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য বলে চিহ্নিত হয়। যার মধ্যে প্রথম দফায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ৭০ হাজার বাড়ির অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। তবে কেন্দ্রের তরফে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় একটিও বাড়ি নির্মাণ করা যায়নি। যা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল।

তবে পখন্না পঞ্চায়েতের দাবি, পেশায় দিনমজুর মুক্ত বাগদির নাম আবাস প্লাসের প্রথম দফার উপভোক্তা তালিকায় নেই। নির্মল বাংলা মিশন প্রকল্পে শৌচালয়ও পাননি তিনি। যা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে। সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরী বলেন, “মুক্তর মতো যোগ্য মানুষের নাম আবাস প্লাস তালিকায় কেন নেই, সেটাই বড় প্রশ্নের। তাহলে কেমন সমীক্ষা হয়েছে? রাজ্যের তৃণমূল ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নোংরা রাজনীতির শিকার হচ্ছেন মুক্তর মতো দুঃস্থ মানুষজন।’’

তৃণমূল পরিচালিত পখন্না পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অনুপম গোস্বামী জানান, তাঁদের পঞ্চায়েত এলাকায় আবাস প্লাস তালিকায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ৯১৩ জন উপভোক্তার নাম আছে। তিনি বলেন, “মুক্তর নাম কেন নেই জানি না, তবে তাঁর কিছু আত্মীয়ের নাম ওই তালিকায় রয়েছে। সরকারি প্রকল্পে শৌচালয় গড়ার উপভোক্তা তালিকায় মুক্তর নাম ছিল। তবে সেই প্রকল্পেও প্রথমে নিজে অর্থ দিয়ে শৌচালয় গড়তে হয়। কিন্তু সেই টাকা খরচ করার সঙ্গতি মুক্তর নেই বলেই শৌচালয় গড়তে পারেননি।’’

মুক্তর বাড়িতে দুর্ঘটনার পরে এলাকার পাঁচটি বাড়িকে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করে ১৩ জন বাসিন্দাকে স্থানীয় কল্যাণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিবির করে রেখেছে পঞ্চায়েত। তাদের খাবার ব্যবস্থাও পঞ্চায়েত করেছে বলে জানান অনুপম।

বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ তথা ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের দাবি, “তৃণমূলের দুর্নীতির জন্যই আবাস প্লাস প্রকল্পের বরাদ্দ আটকে রয়েছে। বহু যোগ্য মানুষের নাম ওরা তালিকায় তোলেনি।” বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রের বঞ্চনার জন্যই আজও এই মানুষগুলি পাকা বাড়ি পাননি। তবে আর কেন্দ্রের সাহায্য দরকার নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই বিশেষ প্রকল্পে তাঁদের পাকা বাড়ি করে দেবেন।’’ এই বিতর্কে ঢুকতে রাজি নয় মুক্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ যাত্রায় খুব জোর রক্ষা পেয়েছে আমার মেয়ে-জামাই। কিন্তু আর কত দিন এ ভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাঁচাবাড়িতে বাস করতে হবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Birbhum Wall Collapse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy