Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Councilors

শ্যামের পথে দলত্যাগী ১১

ফোনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “দল বদলানো কিছু নেতাকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গা থেকেই আমি ফোন পেয়েছি।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫৩
Share: Save:

বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় তৃণমূলে ইস্তফা দিয়েছেন বৃহস্পতিবার। তাঁকে অনুসরণ করে, শুক্রবার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১১ জন বিদায়ী কাউন্সিলর তৃণমূল ছাড়লেন। এ দিনই তাঁরা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখেন। তবে সে চিঠি তাঁরা শ্যামবাবুর কাছেই জমা দেন। ওই চিঠি সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে শ্যামবাবু বলেন, “১১ জন বিদায়ী কাউন্সিলরের ইস্তফাপত্র জেলা তৃণমূল সভাপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।”

পদত্যাগী কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন বিষ্ণুপুরের দীর্ঘদিনের উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়, দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর রবিলোচন দে, উদয় ভকত, শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। বুদ্ধদেববাবু বলেন, “শ্যামদার সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছি। তাই তিনি যে দিকে যাবেন, আমরাও সে দিকেই যাব।”

১৯টি ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুর পুরসভায় তৃণমূলের ১৮ ও বিজেপির এক জন কাউন্সিলর ছিলেন। শ্যামবাবুর অনুগামীদের দাবি, এত জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছাড়ায় বিষ্ণুপুর পুরসভায় তৃণমূল সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাল। যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তা দাবি করেন, “পুরবোর্ডের মেয়াদ বহু আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। ফলে, পুরসভা যেমন প্রশাসক চালাচ্ছেন, তেমনই চলবে।” বিষ্ণুপুরের পুরপ্রশাসক দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তৃণমূলেই রয়েছেন।

এই ঘটনায় শ্যামবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে এ দিন বাঁকুড়ায় জেলা তৃণমূল ভবনে শ্যামলবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘উনি দলে শুধু গোষ্ঠী-রাজনীতি করতেন। দলকে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছিলেন। চলে গিয়েছেন, ভাল হয়েছে। তবে যে দলেই তিনি যাবেন, সে দলটাই শেষ হয়ে যাবে।”

আর শ্যামবাবুর দাবি, “আমি দল ছেড়ে দিয়েছি। শ্যামলেরা এখন স্বস্তিতে থাকুক। ওদের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শ্যামল নিজে জিততে পারেন কি না সেটাই আগে দেখুক। আমি বিজেপির হাতে এই জেলার ১২টি বিধানসভাই তুলে দেব।”

শ্যামবাবু দাবি, আজ, শনিবার মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় ৫২টি বাস ও ১৪টি ছোট গাড়িতে কয়েকহাজার কর্মী নিয়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন। তিনি দাবি করেন, “জেলা থেকে যে কর্মীরা আমার সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেবেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।’’

অন্য দিকে, তৃণমূল ভাঙলেও বাঁকুড়া জেলায় বেশ একটা স্বস্তিতে নেই বিজেপি শিবিরও। শ্যামবাবু তৃণমূল ছাড়ার পরেই বৃহস্পতিবার রাতেই বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে শ’পাঁচেক কর্মী জমায়েত করে দাবি করেন, শ্যামবাবুকে তাঁদের দলে নেওয়া যাবে না। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহারকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঘেরা করাও হয়। শুক্রবার হরকালীবাবু বলেন, “আমি রাজ্য নেতৃত্বকে দলের কর্মীদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছি। তবে শ্যামবাবুর দলে ঢোকা বা না ঢোকায় আমার কোনও হাত নেই।” আর শ্যামবাবু বলেন, ‘‘ওই বিক্ষোভকে আমল দিচ্ছি না। আমি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে কাজ করব।”

এরই মধ্যে খাতড়া মহকুমার তৃণমূলের কিছু নেতাও বিজেপিতে যেতে পারেন বলে জেলা রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যা নিয়ে এ দিন বিজেপির অন্দরে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাঁকুড়া জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে তৃণমূল নেতারা আমাদের কর্মীকে খুন করলেন, এখন তাঁরাই আমাদের দলে এলে সাধারণ মানুষের কাছে কোন মুখে ভোট চাইতে যাব?’’

সূত্রের খবর, এ দিন বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ রাজ্য নেতৃত্বের একাংশকে ফোনে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি বিবেকানন্দবাবু। তিনি বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না। যা বলার, দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকেই জানাব।”

ফোনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “দল বদলানো কিছু নেতাকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গা থেকেই আমি ফোন পেয়েছি। তবে দলকে বড় করতে গেলে বৃহত্তর স্বার্থেই বিষয়টি মেনে নিতে হবে।” তাঁর সংযোজন, “যাঁরা আসছেন, এক সময় তাঁরাই অন্য দলের হয়ে আমাদের উপরে হামলা করতেন। ফলে, ক্ষোভ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে বিজেপিতে এলে ধাপে ধাপে তাঁরা মানিয়ে নেবেন। চলতে চলতে মনের মিলও হয়ে যাবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Councilors Shyam Mukherjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy