Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
জঙ্গি-হানায় আগেও প্রাণ গিয়েছে এ রাজ্যের জওয়ানদের। কেমন আছে তাঁদের পরিবার?

‘রাজ্য সরকার আমাদের কোনও খোঁজ রাখে না’

স্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছে বাঙালি সেনা অফিসারের পরিবার।

ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে মা শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে মা শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০১
Share: Save:

সোফার কাছের টেবিলেই ছবিটা রাখা। সামনে অজস্র মেডেল। তার সামনে টুলের উপর নেতিয়ে থাকা গোর্খা টুপির নীচে পরম যত্নে পাট করে রাখা সবুজ পোশাক, কালো বেল্ট। টুলের নীচে রাখা বুটজোড়া এখনও চকচকে। সে দিকে তাকিয়ে ৭১ বছরের বৃদ্ধা শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে ওঠেন, ‘‘দিস ওয়াজ় হিজ় লাস্ট ইউনিফর্ম।’’

২০০২ সালের মার্চে টহলদারিতে বেরিয়ে কুপওয়ারা সেক্টরের পাহাড়ে জঙ্গিদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন গোর্খা রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন, ২৪ বছরের অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্লাদেবীর একমাত্র ছেলে। যিনি শুধুমাত্র সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন বলে ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় বসে ফাঁকা খাতা জমা দিয়েছিলেন। সেই অনির্বাণের নিহত হওয়ার কথা জানাজানি হতেই ভিড় ভেঙে পড়েছিল সল্টলেকে সেনাবাহিনীর আবাসন ‘মহাবীর বিকাশ’-এ শুক্লাদেবীদের দোতলার ফ্ল্যাটে। জাতীয় পতাকায় মোড়া অনির্বাণের কফিন কাঁধে নিয়ে ভিড় ঠেলে অতি কষ্টে বসার ঘরে ঢুকে ছিলেন সেনা অফিসারেরা। শুক্লাদেবীর স্বামী রবীন্দ্রনাথবাবু প্রাক্তন কর্নেল। সে দিন দম্পতিকে ছেলে হারানোর সান্ত্বনা দিতে ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী, কাউন্সিলর, পুলিশ আধিকারিকেরা।

আর এখন?

স্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছে বাঙালি সেনা অফিসারের পরিবার। রবীন্দ্রনাথবাবু হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত। শুক্লাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলের মৃত্যুর পরে ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছিল মানুষটা। এখন খুবই অসুস্থ। আমিই এই নড়বড়ে শরীরে স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’ একই সঙ্গে বৃদ্ধার ক্ষোভ, ‘‘যে দিন ছেলের দেহ কফিনবন্দি হয়ে এই ঘরে এসেছিল, সে দিন এক মন্ত্রীও এসেছিলেন। তার পরে আর কেউ আসেননি। রাজ্য সরকারের উচিত সেনাদের পরিবারের একটু খোঁজ নেওয়া। রাজ্যে বিষমদ খেয়ে কেউ মারা গেলে সরকার তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু আমাদের মতো পরিবারের খোঁজ রাখে না।’’

পুলওয়ামায় সেনাবাহিনীর উপরে হামলার পরে সোশ্যাল মিডিয়া আবেগ-আক্রোশে ভেসে যাচ্ছে। মোমবাতি-মিছিল হচ্ছে। এ সবই তাৎক্ষণিক বলেই মনে হয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। স্বামীর সঙ্গে এক সময় দীর্ঘদিন কাশ্মীরে ছিলেন শুক্লাদেবী। প্রাক্তন ওই ইংরেজি শিক্ষিকার কথায়, ‘‘এখন বড্ড ঘৃণা একে অন্যের প্রতি। তখনও এতটা ছিল না। এত বছরে কত বাড়িতে জাতীয় পতাকা মোড়া কফিন গিয়েছে। আরও কত দিন এ ভাবে চলবে?’’

মেয়ে আমেরিকায়। বাড়িতে দু’জন পরিচারিকা। তাঁরাই শুক্লাদেবীদের দেখাশোনা করেন। অবশ্য বৃদ্ধা নিশ্চিন্ত, ‘‘সেনাবাহিনী পাশে থাকে। আমরা তাই একা নই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE