বুদ্ধজীবি মঞ্চ’ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘যে হেতু অভিযোগ স্থানীয় পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনকারী ও আনিসের পরিবারের আস্থাশীল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তদন্ত করে দোষীদের চরম শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
আনিসের বাড়িতে আব্দুল মান্নান, বিকাশ ভট্টাচার্য প্রমূখ।
ছাত্র-নেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। বাড়ছে প্রতিবাদ। সব বিরোধী দল ও বিভিন সংগঠনই প্রতিবাদে শামিল। তবে সামনের সারিতে রয়েছে বামেরা। আনিসের ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রতিবাদে আজ, সোমবার শহরে ডাক দেওয়া হয়েছে নাগরিক মিছিলের। বামেরা ওই মিছিলের মূল উদ্যোক্তা হলেও কোনও দলীয় পতাকা ব্যবহার করা হবে না জানিয়ে সমাজের সব অংশের মানুষকে প্রতিবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। বাম জমানায় রিজ়ওয়ানুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষা দিবসে আজ ধর্মতলায় জমায়েত হয়ে নাগরিক মিছিল যাওয়ার কথা মহাজাতি সদন পর্যন্ত।
শাসক দলের তরফে মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তুলেও অপরাধীদের শাস্তির দাবিকে সমর্থন করেছেন। ফিরহাদ রবিবার বলেছেন, ‘‘বিক্ষোভ করে আর কী হবে? অপরাধীদের শাস্তি অবশ্যই হওয়া দরকার। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ বিষয়টা দেখছে।’’ তিনি শনিবারই বলেছিলেন, ‘‘এ রকম দুঃসাহসিক কাজ যারা করে, তাদের পিছনে কারা আছে, কী উদ্দেশ্য আছে, দেখতে হবে। এটা বাংলার ট্রেন্ড নয়। এ রকম উত্তরপ্রদেশে হয়। এর পিছনে বাইরের রাজ্যের মদত আছে কি না, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র কী আছে, সব কিছু বিশদে তদন্ত হওয়া উচিত।’’ পুলিশ অবশ্য আনিস-কাণ্ডকে এখনও ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ বলেই উল্লেখ করছে। হাওড়ার আমতায় আনিসের বাড়িতে শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশের পোশাকে যারা গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে ছাত্র-নেতার পরিবার, তারা পুলিশই নাকি অন্য কেউ, সেই বিষয়ে এ দিন ‘তদন্ত চলছে’ বলে মন্তব্য করতে চাননি জেলা (গ্রামীণ( পুলিশ সুপার সৌম্য রায়। ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের ডিজি-ও এ দিন পুলিশ সুপারকে ডেকে ঘটনার রিপোর্ট নিয়েছেন।
আমতায় আনিসের বাড়িতে এ দিন দফায় দফায় যে রাজনৈতিক নেতারা গিয়েছেন, তাঁদের সকলকেই ওই ছাত্র-নেতার বাবা সালেম খান বলেছেন, পুলিশের তদন্তে তাঁদের কোনও ভরসা নেই। তাঁরা সিবিআই চান। সালেমের পাশে দাঁড়িয়ে সিপিএমের ছাত্র ও যুব প্রতিনিধিদলের তরফে ময়ূখ বিশ্বাস, দীপ্সিতা ধর, প্রতীক উর রহমান, শুভজিৎ সরকারেরা বলেছেন, অপরাধীদের শাস্তি ও বিচারের দাবিতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চলবে। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মিত্র, দলের নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা আনিসের বাড়িতে পৌঁছলে তাঁদের মাধ্যমেই ছাত্র-নেতার বাবার সঙ্গে কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ‘দলদাস’ পুলিশের ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছেন তিনি। আমতায় ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’র প্রতিনিধিদল নিয়ে গিয়েছিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য, দীপালি ভট্টাচার্য, সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়েরা। বিকাশবাবু জানান, অপরাধীদের খুঁজে বার করা ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআইয়ের কর্মী-সমর্থকেরা এ দিনই রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-অবরোধে নেমেছিলেন। আমতা থানায় বিক্ষোভের পাশাপাশি রাজাবাজার, যাদবপুর, ধর্মতলার কাছে লেনিন সরণিতে কিছু সময়ের জন্য অবরোধ হয়। রাজাবাজারে ছিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ান। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ বাহিনী বিক্ষোভ-স্থলে যায়। রাজাবাজারে আধ ঘণ্টার বেশি, যাদবপুরে ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। ছাত্র-হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র পরিষদ আজ বিধান ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে। শোভাবাজার থেকে আজ সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিলের ডাক দিয়েছে বিজেপির উত্তর কলকাতা যুব মোর্চাও।
আনিসের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি করলেও সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এ দিন পুরভোটের প্রচারের ফাঁকে রায়গঞ্জে বলেছেন, ‘‘আমরা সিআইডি বা সিবিআই তদন্ত চাই না। রাজনৈতিক বোঝাপড়ার চাপে ওরা কিছুই করতে পারবে না। ইসলামপুরের দাড়িভিটে দুই ছাত্রের খুনের ঘটনাতেই তা স্পষ্ট হয়েছে। আমরা আনিসের খুনের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’’ আনিসের বাবা যেমন পুলিশে ভরসা নেই বলে জানিয়েছেন, সেই সুরেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের পুলিশমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেবেন তৃণমূল বিধায়কের স্বামী পুলিশ সুপার! কে কাকে কী ভাবে ভরসা করবে?’’
আনিস-কাণ্ড প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘এক জন শিক্ষিত, সংখ্যালঘু ছেলেকে এ ভাবে খুন করা হল। পুলিশের পোশাকে খুন করার মারাত্মক অভিযোগ এসেছে। রিজ়ওয়ানুরের ঘটনার মতো পুলিশের দিকে অভিযোগ উঠেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তবেই প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে।’’ মালদহে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন যারা এসেছিল, তারা পুলিশের লোক নয়, অন্য রাজ্যের হতে পারে। ওঁর জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, তারা বাংলায় কথা বলছিল। এবং অনিস খান কখন জলসা শুনতে গিয়েছে এবং ফিরেছে, সমস্ত তথ্য তাদের কাছে ছিল।’’
এরই পাশাপাশি শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধজীবি মঞ্চ’ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘যে হেতু অভিযোগ স্থানীয় পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূলের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনকারী ও আনিসের পরিবারের আস্থাশীল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তদন্ত করে দোষীদের চরম শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যই এটা প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy