ই-স্কুটারে সওয়ার মমতা বন্দোপাধ্যায়। —ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদের ‘স্টিয়ারিং’ এ বার নিজের হাতেই নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে ই-স্কুটার চেপে নবান্নে গিয়েছিলেন তিনি। বিকেলে নবান্ন থেকে বাড়ি ফেরার সময় নিজেই সেই ই-স্কুটার চালালেন মমতা। দু’পাশে এবং পিছনে যদিও সেই ই-স্কুটার ধরে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। পাশে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর স্কুটারে চেপেই সকালে কালীঘাটের বাড়ি থেকে নবান্নে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মাঝামাঝি পর্যন্ত মমতা ওই ই-স্কুটার চালান। এর পর তা চালান ফিরহাদ হাকিম। পরে হরিশ মুখার্জি রোডে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের নিজের হাতে নেন স্কুটারের ‘হ্যান্ডল’। প্রতীকী প্রতিবাদে তো বটেই, এই বয়সে অনভ্যস্ত হাতে মমতা যে ভাবে স্কুটার চালালেন, তা চমকে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতাকে স্কুটার কেন সাইকেল চালাতেও কেউ কখনও দেখেননি।
মমতা যখন রাস্তা দিয়ে ই-স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁর নিরাপত্তায় শহরের আকাশে উড়েছে ড্রোন। তবে কলকাতার রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনও আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে স্কুটার চালিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে সমস্ত গাড়িই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। রাজপথে মমতাকে এ ভাবে স্কুটার চালাতে দেখে ভিড় জমে যায় রাস্তার দু’ধারে। মোবাইলে ছবি তুলতে থাকে উৎসাহী জনতা। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটাই আসল জননেত্র্রীর ছবি। প্রতিবাদের প্রতীক এ ভাবেই হয়ে উঠতে হয়।’’
যদিও ই-স্কুটার চালিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘প্রতিবাদ’কে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পায়ের তলায় মাটি নেই বুঝে স্কুটারের আসনে বসেছেন মমতা। এই সব নাটুকেপনায় বাংলার মানুষের মন পাওয়া যাবে না। আর অপ্রচলিত শক্তিতে চলা গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ আগেই নিয়েছে বিজেপি সরকার। পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সে প্রসঙ্গের কথাও উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এই ঘটনাকে মমতার ‘ই-নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ই-স্কুটার চালালে সারা ভারতেই জ্বালানী নির্ভরতা কমবে। মুখ্য়মন্ত্র ীর এটা আগেই চালানো উচিত ছিল। ভোটের আগে উনি এখন ই-নাটক করছেন।’’ এ রাজ্যে কেন পেট্রল-ডিজেলের উপর কর কমানো হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধীর।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান-ও মুখ্যমন্ত্রীর স্কুটার চালানোকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনেক নাটক রাজ্যের মানুষ কয়েক বছর ধরেই উপভোগ করছেন। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরাকর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের মানুষের লাখ লাখ টাকা লুঠ হচ্ছে। অচ্ছে দিনের প্রতিফলন মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী নাটক করছেন!’’
সিপিএম-ও প্রায় একই সুরে আক্রমণ করেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। দলের নেতা তথা উত্তর দমদমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা পেট্রোপণ্যের প্রতিবাদ না কি ইলেট্রিক স্কুটারের বিজ্ঞাপন? তৃণমূল তো সব জায়গা থেকেই কাটমানি খায়। এ ক্ষেত্রেও বি়জ্ঞাপন থেকেও কাটমানি নিতে পারে। রাজনীতিকে মুখ্যমন্ত্রী এত লঘু করে দিচ্ছেন কেন? কেন এমন বালখিল্যতা দেখালেন তিনি? সব কিছুকেই নাটকের কায়দায় পেশ করে প্রতিবাদের রাজনীতিকে তিনি বালখিল্যতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, এমন বালখিল্য আচারণ করে বাঙালির লজ্জার কারণ হবেন না।’’
তৃণমূল যদিও এর মধ্যে কোনও ‘চমক’ বা ‘নাটক’ দেখছে না। দলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘দলনেত্রী যে কোনও প্রতিবাদই রাস্তায় নেমে করেন। গত ৪০ বছর ধরে রাজ্যের মানুষ তা দেখে আসছে। আজও সে ভাবেই রাস্তায় নেমে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অচ্ছে দিনের নামে নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে ভাবে পেট্রল ও ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন। পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের গরিব মানুষের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তা একেবারেই যথার্থ।’’
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার নবান্নের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কেন পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করছেন সেখানে তা সবিস্তারে লেখা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২০১৪-য় জানুয়ারিতে অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ছিল ১০৫.২৯ ডলার। তখন লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ছিল ৮০ টাকা ২০ পয়সা। ডিজেল ৫৯ টাকা ৫০ পয়সা (২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)। ২০২১-এর জানুয়ারিতে অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ছিল ৫৪ টাকা ৭৯ পয়সা। কিন্তু পেট্রল লিটার প্রতি ৯১ টাকা ১২ পয়সা। ডিজেল ৮৪ টাকা ২০ পয়সা (২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)। এমন বেশ কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘এই সবের যাঁতাকলে পড়ে ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy